ইজিবাইকের লাইসেন্স দিবে কেসিসি জুলাইতে
৭৭৯২টি ইজিবাইক লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চূড়ান্ত : ৯৬টি লাইসেন্স বাতিল
দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে ইজিবাইক চালক ও মালিকদের। খুলনায় আবেদনকৃত ইজিবাইকের লাইসেন্স আবেদন ফরম যাচাই বাছাই ইতোমধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) সম্পন্ন করেছে। যাচাই বাছাই শেষে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চূড়ান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭শ ৯২টি। বাতিল করা হয়েছে ৯৬টি আবেদন ফরম। চলাচলের ফি ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জুলাই মাসেই দেওয়া হবে ইজিবাইকের লাইসেন্স। গতকাল বিকেলে নগরভবনে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে লাইসেন্স যানবাহন শাখা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সভায় আলোচ্য বিষয় তুলে ধরেন কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুক হোসেন তালুকদার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কেসিসি খুলনা ৭ হাজার ৭শ ৯২ মালিক-চালককে ইজিবাইক চলাচলের (অনুমতিপত্র) লাইসেন্স দিচ্ছে। ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে গত ২১ জানুয়ারি নগরভবনে ইজিবাইক চালকের হাতে ফরম তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে নগরীতে ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি প্রদানসংক্রান্ত আবেদন ফরম বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজিবাইক চালক-মালিকদের মাঝে ফরম বিতরণ করা হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ফরম জমা প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষ হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ১০ হাজার ফরম বিক্রির টার্গেট থাকলেও বিক্রি হয় ৮২২২টি, আর জমা পড়ে ৭ হাজার ৮শ ৮৮টি। ফরমের দাম রাখা হয় ৫শ টাকা। এতে সিটি করপোরেশনের আয় হয় ৪১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। যাচাই বাছাই শেষে ৭৭৯২টি লাইসেন্স সঠিক বলে সনাক্ত হয়। বাতিল করা হয় ৯৬টি লাইসেন্স। লাইসেন্সের আবেদনপত্রগুলো যাচাই বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত আবেদনপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রেজিস্টারভুক্ত করা এবং আইটি শাখার মাধ্যমে এক্সেল সিট ও ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রস্তুতকরণের সিদ্ধান্ত হয় গতকালের সভায়। চলাচলের অনুমতি ফি ১০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বছর থেকে নবায়ন ফি ১৭শ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সহায়তায় ১৫ জানুয়ারি থেকে বাইরের ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় কেসিসি। এ জন্য নগরীর আটটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসায় কেসিসি ও ট্রাফিক পুলিশ। তবে ১৫-২০ দিন পর থেকে এ কার্যক্রম অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে।
কেসিসি লাইসেন্সের মূল্য ১০ হাজার টাকা রাখার যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পুনঃবিবেচনার আহবান জানিয়েছেন ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মানিক। তিনি ইজিবাইক লাইসেন্স ফি ৩ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে রাখার জোর দাবি জানান।
সুজনের জেলা সম্পাদক অ্যাড. কুদরত ই খুদা বলেন, নগরীর যানজট নিরসনে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে ইজিবাইকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেসিসি যে উদ্যোগ নিয়েছে এজন্য মেয়রকে সাধুবাদ জানাই। এতে করে কেসিসির রাজস্ব আদায় বাড়বে। পাশাপাশি ইজিবাইক জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। সড়কে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা। এ ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার পর সব ইজিবাইকে একই রঙ করা, রুট নির্ধারণ করা এবং চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও জরুরি বলে এ নাগরিক নেতা মনে করেন।
কেসিসির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আবেদনপত্রগুলো যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত আবেদনের বিপরীতে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। চলাচলের অনুমতি ফি রাখা হবে ১০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় বছর নবায়ন ফি রাখা হবে ১৭শ টাকা। রাজশাহীসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে এসব ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ইজিবাইকের ডানপাশ পুরো বন্ধ রাখা হবে। রঙ করা হবে লাল ও সবুজ। ইজিবাইক স্ট্যান্ড কোথায় করা হবে তা ঠিক করবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সব কিছু ঠিক থাকলে জুলাই মাসেই ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও যানজট নিরসনে ২০১৬ সালে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার ইজিবাইকের লাইসেন্সের ব্যাপারে সভার আহ্বান করেন। সভায় নগরীতে ইজিবাইকের সংখ্যা ৫ হাজারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। ওই আলোকে ৫ হাজার ইজিবাইক চলাচলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় কেসিসি। কিন্তু ওই ৫ হাজার ইজিবাইক মালিককে অবশ্যই মহানগরীর স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। তবে পূর্বের ১ হাজার ৯৬৩টি ছাড়া নতুন আরও ৩ হাজার ৪০টি ইজিবাইক এ অনুমতির আওতায় পড়বে। ২০১৭ সালের নগরভবনে সাবেক দু’ সংসদ সদস্য, মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সম্মিলিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেন। তারই ধারাবাহিকতায় মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে দীর্ঘ কয়েক বছর ঝুলে থাকা ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের ইতি টানছেন