দৈনিক সমাজের কন্ঠ

২৫শে মার্চ ব্লিটজ থেকে অপারেশন সার্চলাইট

ঋতু দে (স্টাফ রিপোর্টার) – ২৫ শে মার্চ তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের নাম। ১৯৭১সালের এই দিনে অর্থাৎ ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয় এক নৃশংস গণহত্যা।পূর্ব পরিকল্পিত এই গনহত্যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করা এবং একটি জাতিকে মেরুদণ্ডহীন চতুষ্পদে পরিনত করা। প্রসঙ্গত এই গণহত্যা ছিল অপারেশন ব্লিটজ এর পরিবর্তিত প্রতিমান। কিছু পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বইতে ‘অপারেশন ব্লিটজ’ নামে একটি সামরিক পরিকল্পনার উল্লেখ পাওয়া যায়। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং পূর্ব বাংলার আন্দোলন দমনের জন্য এই পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। তারই সূত্র ধরে বড় বড় জেলা শহরগুলো কব্জা করার উদ্দেশ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়।তবে শেষ পর্যায়ে এসে তারা অপারেশন ব্লিটজ বাতিল করে অপারেশন সার্চলাইটের নীল নকশা প্রণীত হয় ।২৫ শে মার্চ রাতে বাঙ্গালির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।আহ্বান জানান মুক্তিকামী জনতাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।এরই জের ধরে পাক বাহিনী হত্যাযজ্ঞ আরও বেরে চলে।ঘুমন্ত নিরস্ত্র, নিরীহ সাধারণ জনগণের প্রাণনাশের ভয়ংকর খেলায় মত্ত হয় তারা, ফলস্বরূপ ধ্বংস স্তুপে রুপ নেয় পূর্ব বাংলা।২৫ শে মার্চ এ হামলা হলেও এর পরিকল্পনা শুরু হয় মার্চের প্রথম থেকই।১৭ ই মার্চ টিক্কা খান,রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা তৈরী করে।১৯ শে মার্চ থেকে পূর্ব বাংলার বাঙ্গালী সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরন শুরু হয়।২০ মার্চ সরকার অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করে।ঐ দিন জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও তার সামরিক উপদেষ্টা হামিদ খান,জেনারেল টিক্কা খান,জেনারেল পিরজাদা,জেনারেল ওমর ফারুকে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টমেন্টে সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।২৪ এ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র ও রসদ খালাস হওয়া শুরু হয়।এরপর ২৫ শে মার্চ সূচনা হয় সেই কালো অধ্যায়ের।

মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ঢাকা শহরের মূল দায়িত্ব দেয়া হয়।সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমন শুরু হয় গভীর রাতে।ঢাকার প্রতিটি স্থানে তারা হামলা চালায়।শত শত ছাত্রকে তারা নির্বিচারে হত্যা করে।ঢাকাসহ সারা দেশে দখলদার বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায়।অপারেশনটির উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় শহর দখল করে নেয়া এবংদেশকে মেধাশূণ্য,নেতৃত্বহীন করা, রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের,বুদ্ধিজীবিদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। চারিদিক লাশের স্তুপ, গণকবর,গুরুত্বপূর্ন স্থাপনার ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় অপারেশন সার্চলাইট। এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। ব্রিটিশ লেখক ও গবেষক রবার্ট পেইন তাঁর ‘ম্যাসাকার : আ ট্র্যাজেডি অ্যাট বাংলাদেশ’ বইতে লিখেছেন, ’৭০-এর নির্বাচনের পর ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলএবংপূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে যায় ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। ২৫ মার্চ শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্ব ইতিহাসে জঘন্যতম কালরাত হিসেবে পরিচিত। নিহত শহীদের স্মরনে দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয় বাংলাদেশে।