অভয়নগরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল স্বাীকৃতি না পেয়েই চলে গেলেন না ফেরার দেশে

0
0

অভয়নগর প্রতিনিধি – ৭১ এর রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা,যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের সবুজবাগ এলাকায় বসবাসকারী আব্দুল জলিল মোল্যা(৮০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইন্তেকাল করেছেন(ইন্নালি লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্াহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, চারপুত্র, এক কন্যা সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দৈনিক যশোর পত্রিকার অভয়নগর উপজেলা প্রতিনিধি, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর অভয়নগর উপজেলা ইউনিটের কার্যকরি কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন লিটনের পিতা। তার মৃত্যুতে যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নের্তৃবৃন্দ ও উইনিয়নের অভয়নগর উপজেলা ইউনিটের সকল সদস্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের স্থান পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার ফতে মোহাম্মদপুর গ্রামে। বর্তমানে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার নওয়াপাড়া গ্রামে বসবাস করেন। ১৯৭১ সালে শ্রমিকের চাকরি করতেন অভয়নগর উপজেলার বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলে। তিনি ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে দেশপ্রেমে উৎজীবিত হন। ২৫ মার্চের কালোরাত তাকে মর্মাহত করে। তখন তিনি টগবগে যুবক। স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মন উতালা হয়ে উঠেছে।তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। ২৯ মার্চ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে ৭ নং সেক্টরে কাজী নূরুজ্জামান বীর উত্তম কম্ান্ডরের অধীনে যুদ্ধ করেন। ওই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুল জলিল ঈশ্বরদী উপজেলার শ্রীরামগাড়ি,মাঝগ্রাম, দাশুলিয়া বিমান বন্দরে সম্মুখ যুদ্ধে পতিত হয়েছিলেন। তার সহযেদ্ধারা ছিলেন, মোস্তাাফিজুর রহমান(গেজেড নং-৯৫৭) গোলাম মাহমুদ বুলবুল(৮১৭)শওকত আলী(৮০৭) প্রমুখ। আব্দুল জলিল জানান, বিমান বন্দর এলাকা মুক্ত করতে এক ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে অনেক পাকসেনা সেনা নিহত হয়। শত্রæরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে তার জন্য আগে থেকে সড়কের সেতু মাইন বিষ্ফোরণ করে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধে পরাজিত নিশ্চিত ভেবে শত্রæরা পালাতে থাকে। এ সময়ে পাক সেনারা তাদের পথ চেনানোর জন্য একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। ওই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আত্মঘাতি হয়ে পাক সেনাদের সেই ভাঙ্গা সেতুর রাস্তা ধরে দ্রæত গাড়ি চালাতে বলেন। দ্রæতগামি গাড়ি ভাঙ্গা সেতুর নীচে জলাশয়ে পড়ে ডুবে সকলে নিহত হয়। এদিকে আব্দুল জলিলের সাহসিকতা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পাক সেনাদের সহযোগি রাজাকার বাহিনী ক্রেধে জ্বল জ্বল করে ওঠে। রাজাকার বাহিনী যুদ্ধের মাঝে এক দিন প্রবেশ করে তার বসত বাড়িতে। সেই দিন বাড়িতে তার পিতা মাতা বোন ও বোনের সন্তান সহ ছয় জন উপস্থিত ছিলেন। রাজাকার বাহিনী তাদের বেঁধে রেখে ছোরা দিয়ে কুপিয়ে একে একে নৃশংস ভাবে খুন করে তার জন্মদাতা পিতা হোসেন আলী মোল্যা, মাতা মহরজান বিবি, বোন সুরাতন বিবি, বোনের মেয়ে আয়শা খাতুন, হাসিনা খাতুন ও একজন দুধের শিশু পুত্রকে। ঘাতকেরা হত্যা করে লাশ গুলো ফেলে রেখে বাড়ি ঘরের সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আব্দুল জলিলের নাম ওঠেনি। রাষ্ট্রীয় ভাবে তাকে কোন সম্মাননা দেওয়া হয় না। তিনি দুইবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তার আকুতি জীনবদর্শায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পেলেও তার লাশটি যেন রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here