মিঠুন দত্ত (অভয়নগর) – আজ ৪ঠা জুলাই, ২০১৯ অভয়নগরে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত।আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রথযাত্রা উৎসবে পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব, শ্রীশ্রী বলভদ্র এবং শ্রীমতি শুভদ্রা মহারানী রথে করে বের হন মানবকুলকে কৃপা করতে, মুক্তি প্রদান করতে। তাই মুক্তিকামী, কৃপাপ্রার্থীরা রথের রশি ধরে টেনে ধরেন প্রভুকে এক নজর দেখতে, প্রভুর কৃপা দৃষ্টি লাভ করার আশায়। বিশের সবচেয়ে বড় আয়োজনে সাড়ম্বরে রথযাত্রা পালিত হয় ভারতের উড়িষ্যর শ্রীধাম জগন্নাথ পূরীতে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এবং বিশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার ধামরাই-এ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রা পালিত হয়ে থাকে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য পুণ্যভুমি ভাটপাড়া গুপ্ত পুরী জগন্নাথ ধাম এ রথযাত্রা পালনের ইতিহাস প্রায় ২ শতাধিক বছরের পুরনো। ইতিহাস বিশ্লেষকদের অভিমত মণিপুর রাজ্যে অষ্টাদশ শতকে ১৮১৯ থেকে ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘চহি তরেৎ খুন্তাকপা’ বা সেভেন ইয়ারস ডিভাস্টেশন-এর সময়কালে যুদ্ধ বিগ্রহে মণিপুর থেকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এবং বাংলাদেশের অভয়নগরে সহ অনেক জায়গায় মণিপুরী রাজা, যুবরাজগণ প্রজাসহ বসতি স্থাপন করেন। যদিও তার আগে থেকেই বাংলাদেশে স্বল্প সংখক মণিপুরী বসতি স্থাপন শুরু হয়েছে বলে ইতিহাসবিদগণ বর্ণনা করেন।
কাঠ, বাঁশ, বেত দিয়ে শক্ত করে বানানো হতো রথ। কাঠের গোল চাঁকা, রথের চার কোনায় লাগানো হয় নিজেদের তৈরী লম্বা ‘ফিরাল’ (পতাকা)। যা মণিপুরী মেয়েরা রঙ বেরঙের কাপড়, জড়ি, ফিতা, লেইস, চুমকি ইত্যাদি দিয়ে যত্ন সহকারে তৈরী করে থাকে। ভাল কাঠের অভাব, ভাল কাঠের অধিক দাম ইত্যাদি কারণে বর্তমানে লোহা, বল্টু, এসএস পাইপ দিয়ে রথ তৈরী করা হচ্ছে। নির্মান কৌশলেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। রশি ধরে টেনে রিকাবীবাজারে রথ নিয়ে এসে পুণ্যার্থীরা জয়দেব কীর্ত্তন, আরতি, হরিনাম সংকীর্ত্তন ইত্যাদি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করে। বর্তমান প্রতিবছরের মতো অভয়নগরে পালিত হয়।
রথযাত্রা উপলক্ষে অভয়নগরে রথোৎসবের কয়েকদিন আগে থেকেই মেলার আয়োজন শুরু হয়। সে মেলা প্রায় পক্ষকালব্যাপী চলে, রথযাত্রা ও উল্টো বা ফিরা রথযাত্রার পরও। মেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পজাত পণ্য, বাচ্চাদের খেলনা, খই, চিড়া, মুড়ি নানান জাতের খাবার, পটাশ, ময়না, টিয়াসহ অনেক জাতের পোষা পাখি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যায় মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। পূর্বের চেয়ে মেলার আয়োজন, পরিধিও এখন বেড়েছে। শুধুমাত্র শিশু-কিশোরদের উপযোগী পণ্য নয়, কাপড়ের দোকান, গৃহস্থালির আসবাপত্রসহ সকল ধরনের তৈজষপত্র মেলায় বিক্রয় হচ্ছে।
বর্তমানে অভয়নগর পুলিশ-এর সহযোগিতায় রথযাত্রার নির্ধারিত ভাটপাড়া রথোস্থল বছরব্যাপী সবজি ও ফল ব্যাবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করলেও রথোৎসবের স্থানটি রথযাত্রার জনসমাগমের তুলনায় একটু সংকীর্ণ মনে হলেও উৎসবে রথ নিয়ে আসা পাড়া বা মহল্লাগুলোর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত হওয়ায় রথযাত্রা উৎসব দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর ও সার্থকভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।ভাটপাড়া গুপ্ত পুরী জগন্নাথ ধাম রথযাত্রা উৎসব পালনকারী পুণ্যার্থী সকলের প্রাণের চাওয়া আমাদের ভাটপাড়া গুপ্ত পুরী জগন্নাথ ধাম ঐতিহ্যের অংশ রথোযাত্রা পালনের পবিত্র স্থানটিতে একটি সুদৃশ্য তোরণ বা রথযাত্রার সাথে মিল রেখে স্মারক কিছু একটা নির্মান করা হয়েছে এতে ভাটপাড়া গুপ্ত পুরী জগন্নাথ সমৃদ্ধ ইতিহাস আরোও সুসমৃদ্ধ হয়।