স্টাফ রিপোর্টার-যশোরের অভয়নগর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে এক গৃহবধূকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর ভাই বাদী হয়ে গৃহবধূর স্বামী, দেবর এবং দুই খালা শাশুড়ীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওই গৃহবধূর নাম শিল্পী বেগম(৩৪)। তিনি অভয়নগর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের জামাল সরদারের স্ত্রী। গত শনিবার(১০ আগস্ট) গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শিল্পী বেগমের ভাই ইলিয়াস খন্দকার গত মঙ্গলবার(১৩ আগস্ট) অভয়নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ২০ বছর আগে যশোরের অভয়নগর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের খোকন সরদারের ছেলে জামাল সরদারের সঙ্গে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কলসী ফুকরা গ্রামের সাহেব আলী খন্দকারের মেয়ে শিল্পী বেগমের বিয়ে হয়। রাতুল সরদার(১২) এবং রাব্বি সরদার(৫) নামে তাঁদের দুটি ছেলে রয়েছে। জামাল মাদকাশক্ত। বিয়ের পর থেকে জামালের সাথে শিল্পীর প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকতো। এই নিয়ে জামাল মাঝে মধ্যে শিল্পীকে মারপিট করতেন। গত শনিবার সকালে শিল্পী রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জামাল রান্নাঘরে ঢুকে এক লিটার কেরোসিনের বোতলে থাকা কেরোসিন শিল্পীর গায়ে ঢেলে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় শিল্পী চিৎকার দিয়ে রান্নাঘরের বাইরে এসে তাঁর স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন। এতে জামালের দুই হাত পুড়ে যায়। এ সময় শিল্পীর দেবর সোহাগ হোসেন(৩৫), দুই খালা শাশুড়ী নূরজাহান বেগম(৪৫) ও কুলসুম বেগম(৫০) ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু তাঁরা আগুন নেভাতে কোনোরকম চেষ্টা করেননি। আগুনে শিল্পীর সমস্ত শরীর পুড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় শিল্পীকে উদ্ধার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন রোববার(১১ আগস্ট) তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় শিল্পী বেগমের ভাই বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামীরা হলেন শিল্পী বেগমের স্বামী জামাল সরদার, দেবর সোহাগ সরদার এবং দুই খালা শাশুড়ী নূরজাহান বেগম ও কুলসুম বেগম। আসামীদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে নূরজাহান বেগমকে পাইকপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কুলসুম বেগমকে। তাঁকে অভয়নগর থানায় আনা হচ্ছে। আহত জামাল সরদার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভয়নগর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন,’শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে শিল্পী বেগমকে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় শিল্পী বেগমের স্বামী, দেবরসহ চারজনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা তিনজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছি। অপর আসামীকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’