দৈনিক সমাজের কন্ঠ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

তাজ মাহমুদ – বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নটি যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তখন ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

অপর দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব জনমত গড়ে উঠেছিল। সকল মহাদেশের অযুত কোটি মুক্তিকামী মানুষ এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাঁর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি তরান্বিত করে; তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। স্বয়ং জাতির জনক তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে (A Journey from darkness to light)
পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং তার পর দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে কারাগারে আটক করে রাখে। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন তাঁকে ও কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে তিনি পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাঁদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। নয় মাসের যুদ্ধের একপর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্যের আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে।

আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১০ জানুয়ারি এই ঐতিহাসিক দিবসকে আমাদের পালন করতে হবে নতুন আঙ্গিকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখকঃ সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী)
রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
রাঙ্গামাটি।