দৈনিক সমাজের কন্ঠ

মুক্তিযুদ্ধের গণকবর সংরক্ষণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সমাজের কণ্ঠ  ডেক্স -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত গণকবরগুলো সংরক্ষণ করার বিষয়ে তার সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তবে নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধে সারাদেশে ত্রিশ লাখ গণশহীদের চিহ্নিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এ লক্ষ্যে কার্যক্রম নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।শহর ও গ্রামের তফাৎ কমিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চালনের মাধ্যমে মজবুত করার লক্ষে সরকার গৃহীত বহুমুখী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেছেন, ধনী ও গরীবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস এবং প্রান্তিক জনগণের সুরক্ষয় সরকার ব্যপক কার্যক্রম নিয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা হচ্ছে, ‘সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন এবং সবার উন্নয়ন’। এ আদর্শ সামনে রেখে সরকার দারিদ্র্য বিমোচন ও ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য কমাতে ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র, ২০১৫’ প্রণয়ন করেছে।

বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। এতে সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্যের লিখিত প্রশ্নের জবাব দেন সংসদ নেতা।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও পরবর্তী সময়ে পরলোকগত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ২০ হাজার সমাধিস্থল সংরক্ষণ করা হবে। ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের গৃহীত এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেইজ তৈরি করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকার বাইরে কোনো মুক্তিযোদ্ধা থেকে থাকলে তাদের চিহ্নিত করে তালিকায় অন্ত্মর্ভূক্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম শেষ হলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে।

শেখ হাসিনা জানান, এ তালিকার অংশ হিসেবে ৫ হাজার ৭৯৫ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ঠিকানাসম্বলিত পূর্ণাঙ্গ তথ্যও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেসামরিক শহীদ ২ হাজার ৯২২ জন, গেজেটভূক্ত সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ১ হাজার ৬২৮ জন, গেজেটভূক্ত বিজিবি শহীদ ৮৩২ জন এবং গেজেটভুক্ত শহীদ পুলিশ ৪১৩ জন।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা অনুধাবন করেছিলেন, গ্রামীণ উন্নয়ন ছাড়া উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তার সরকার পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যমআয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষে ‘রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করেছিল। এ রূপকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামীণ দারিদ্র্য উলেতখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করা হয়েছে। যার স্লোগান হচ্ছে ‘আমার গ্রাম- আমার শহর’। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। গ্রামীণ জনগণের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়ন, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। দেশের নগর উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রতিটি গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তার সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যমআয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার গত দু’মেয়াদে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন- এ চার স্তম্ভের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রম নিয়ে সফল হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার মহাশূন্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর সফল উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে ১৫০তম অবস্থান থেকে ২০১৮ সালে ১১৫তম অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যে ঈর্ষণীয়।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে ‘নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮’, ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২০-২০২১’ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এর আলোকে আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। জনপ্রশাসনকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে সরকার ই-নথি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের ই-নথি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গণমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। (ফাইল ছবি

)