দৈনিক সমাজের কন্ঠ

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলার আরেক বিপ্লবী ’চে গুয়েভার’ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদার

ডা. শাহরিয়ার আহমেদ – বাংলার আকাশে যখন আরেক চে’র উদয় হয়েছিল সেই মহান বিপ্লবী নেতা সিরাজ শিকদার এর হত্যার পর তখন দম্ভের সঙ্গে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘কোথায় আজ সেই সিরাজ সিকদার’? সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর ঘটনাটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইতিহাসের একটি বর্বরতম ঘটনা। আমরা মধ্যযুগ কিংবা হিটলার, মুসোলিনির আমলে এ ধরনের বর্বরতম ঘটনার নিদর্শন পাই। বুর্জোয়া যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলে থাকে আজকাল আমাদের দেশেও সিরাজ সিকদারের মতো লোক অপরাধ করে থাকলেও তার বিচার পাবার দাবি উপেক্ষিত হতে পারে না। সিরাজ সিকদার যে বিচারবঞ্চিত হয়েছিলেন, সরকারি প্রেসনোটে তখন যা উল্লেখ করা হয়েছিল (জিপ থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুলিতে তিনি নিহত হন)। আর সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হলো তত্কালীন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উল্লাসিত আস্ফালন— ‘কোথায় আজ সেই সিরাজ সিকদার’?
জন্মভূমির পরতে পরতে বিদ্যমান বৈষম্য যাকে পাগল করে দিয়েছিলো- বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নেবিভোর এই বিপ্লবীর দেশপ্রেমকে বাংলাদেশের মানুষ জীবনভর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের এই সূর্য্য সন্তান পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর কাছে যেমন ছিলেন আতংকের নাম, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর কাছেও হয়ে উঠেন জীবন্ত আতংকের নাম। যুদ্ধের মাঠে অনুপস্থিত হীনমন্য নেতৃত্ব ক্ষমতাকে কণ্টকহীন, জবাবদিহিতাবিহীন রাখতে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে মেনে নিতে পারেনি। পারার কথাও নয়। সিরাজ সিকদারের মতো ত্যাগী মানসিকতা শাসকগোষ্ঠীর কোনো কালেই ছিলোনা, থাকতে পারেনা। কারণ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শাসকরা ক্ষমতায় যায়নি; গিয়েছিলো কম্বল চুরি, লবণ চুরি, ব্যাংক লুট, বিদেশী সাহায্য লুট করতে। কিন্তু একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক বিপ্লবীর এটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সঙ্গত কারণেই পাকিস্তানী শাসকের প্রেতাত্মা দেখা গিয়েছিলো তখনকার নেতৃত্বের মধ্যে। চারদিকে হরিলুটে ব্যস্ত শাসকগোষ্ঠী অন্যায়ভাবে নিরস্ত্র এই বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধাকে খুন করে। তারপর সংসদে গিয়ে দম্ভের সঙ্গে আস্ফালনও করে বৈকি। কিন্তু ইতিহাস বড়ই নির্মম! বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে যে আইয়ুবীয় ভ্রাম্যমান আদালতের ভূত, ভারতীয় শোষনের ভূত চেপেছে, সেই ভূত ছাড়ানোর জন্য আজ অনেকগুলো সিরাজ সিকদার দরকার। যাদের দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে যাবে বিদেশী প্রভূতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কুউপদেষ্টারা। যখন নির্লজ্জ শাসকের দেশপ্রেমের চিপায় পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় তিতাসের মতো প্রমত্ত নদী, চেতনার শ্লোগানে ফেনা তুলা শাসকের পায়ের তলায় পিষ্ট হয় নিরপরাধ বিনিয়োগকারী, কর্মহীন স্বামী বউয়ের জন্য দেহখদ্দের, তখন সিরাজ সিকদারদের মতো কমরেড নেতা বড়ই প্রয়োজন।