ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ পঞ্চপান্ডব, বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সোনালী অধ্যায়ের উপাখ্যান। ক্রিকেট ম্যাচে ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে জুড়ে জয় ছিনিয়ে এনে জয়ের গল্প লিখে দিত এই পঞ্চপান্ডবেরা। একটা সময় ছিল যখন তামিম আউট হলে সাপোর্টাররা আশায় বসে থাকতো সাকিব দলের হাল ধরবে, সাকিব বিদায় নিলে হাল ধরবেন মুশফিক, মুশফিক আউট হলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাবেন মাহমুদউল্লাহ। উপরের সবাই আউট হলেও আশা ছিল ব্যাট হাতে যেকোনও সময় মাশরাফি চার-ছক্কার ঝড় বইয়ে দলকে জিতিয়ে দেবেন। যারা স্বীকৃত ছিল পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে। কিন্তু আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লাল-সবুজের দল কার উপর ভরসা করবে? ক্রিকেট বোর্ডের সেচ্চাচারিতা ও অক্রিকেটীয় মনোভাবের কারনে পঞ্চপাণ্ডবের চারজনই যে নেই এই দলে। ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে ক্রিকেট ফ্যানদের মনের আশা। ক্রিকেট হারাতে বসেছে তার ক্রেজ। ক্রিকেট বোর্ডের খামখেয়ালীপনায় তৈরী হয়নি তাদের কোনো যোগ্য উত্তরসুরী।
ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে বিশ্বকাপ স্কোয়াড। কিছুদিন আগেই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, এবার স্কোয়াড থেকেও জায়গা হারালেন। যেখানে বাকি থাকা এক পাণ্ডব সাকিবকে অধিনায়ক বানিয়ে ঘোষণা হয়েছে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড। কিন্তু দলে যারা আছেন তারাই বা কতটা ভরসা দিতে পারবেন তা নিয়ে চলছে প্রচুর আলোচনা ও সমালোচনা। যে কারণে মাহমুদউল্লাহর ছিটকে যাওয়া একই কারণে আবার কারও কারও দলে জায়গা পাওয়ায় জাগিয়েছে বিস্ময়।
লিটন দাস নিয়মিত রান পেলেও ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপের দল থেকে ছিটকে যান তিনি। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু ব্যাট হাতে রান ক্ষরা চলছে তার। সেই সঙ্গে মাঠের খেলার চাইতে বাইরের নেতিবাচক বিষয়েই হচ্ছেন খবরের শিরোনাম। তাই সমর্থকদের মনে একটাই প্রশ্ন সময়ের আগেই কি তাদের ছেটে ফেলা হলো আরও কিছু সময় কি তাদের রাখা যেত না? অন্তত যতদিন সে মানের খেলোয়াড় তৈরি না হয়। এনামুল বিজয়, মুনিম শাহরিয়ার, শান্ত, নাঈম, সাব্বির কতটা আশা পূরণ করতে পেরেছেন? তারা কোথায় সফল হলেন? বিষয়টি আরও একবার ভাববে বিসিবি? এই দল নিয়ে কঠিন কন্ডিশন আর বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে কতটা এগুতে পারবে বাংলাদেশ সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে ইনিংস মেরামতে এসে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহ মানেই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করে বাংলার ক্রিকেট ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দেয়া। ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে জুড়ে দিয়ে মাহমুদউল্লাহ জয় ছিনিয়ে এনে লিখতেন জয়ের গল্প । চরম দুঃসময়েও আশার নিভু প্রদীপটাও জ্বলে উঠত যোদ্ধা রিয়াদের ইস্পাত কঠিন মনোবলে। যিনি ছিলেন তিন ফরম্যাটেই অটো চয়েজ। যার ফলে পেয়েছিলেন সাইলেন্ট কিলারের তকমাটাও। বিবর্ণ ধুসর ভুবনটাও যেন ভোরের স্নিগ্ধতা পেত নীরব ঘাতকের ছোঁয়ায়।
ডেথ ওভারে বাংলার ডেসিগনেটেড হিটার। তবে ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত যে রিয়াদকে দেখা গেছে বর্তমান রিয়াদ তার ছায়া। এশিয়া কাপে ১০৬ স্ট্রাইক রেটে ৫২ রান। চলতি বছর আটটি টি-টোয়েন্টিতে মোটে ১৫১ রান। ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে আসা রিয়াদ এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১২১টি ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে যেটি সর্বোচ্চ।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ায় কার্যত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল রিয়াদের। ৩৬ বছর বয়সী এ তারকা টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়েছেন। কেবল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা যেতে পারে তাকে। নিদাহাসের ছক্কা, কার্ডিফের আঙিনা পঞ্চপান্ডব পাতা রিয়াদ বিপদের ত্রাণকর্তা। স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প লিখে তিনি বেঁচে থাকবেন অমলিন।
এদেশের কোটি ক্রিকেট প্রেমী দেখে ফেলেছে হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালী দিনগুলি।