আজ ৩১শে মে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশ

0
0

ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ আজ ৩১শে মে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিশেষ একদিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখন বড় দলের বিপক্ষে খেলাটাই ছিল স্বপ্ন, তখনই কিনা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দেখা পেয়ে যায় বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের! হ্যাঁ, ১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আজকের এ দিনেই নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। ব্যাট হাতে ৩৪ বলে ২৭ রানের পর বল হাতে ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেদিন বাংলাদেশের জয়টাকে সহজ করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ স্মৃতিচারণা করেছেন ২২ বছর আগের সেই জয়ের—

খালেদ মাহমুদ: আমাদের জন্য, আমার জীবনের জন্য অনেক বড় দিন সেটা। আমরা কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে ওই প্রথম হারাই। এর আগে কেনিয়া, স্কটল্যান্ডের সঙ্গে জিতেছিলাম। কিন্তু ওরা কেউ টেস্ট খেলুড়ে দেশ ছিল না। আমাদের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পেছনেও সেই জয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পাকিস্তানকে বিশ্বকাপে হারানো অনেক বিরাট ব্যাপার ছিল। সেই দলের সঙ্গে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।

মাহমুদ: সেদিন শান্ত (হাসিবুল হোসেন) ও মঞ্জু না খেলায় আমাকে নতুন বল নিতে হয়। আমিও খুশি ছিলাম। কারণ, ইংলিশ কন্ডিশনে বল সুইং করে। আমিও মূলত সুইং বোলার ছিলাম। আমরা ব্যাটিংয়ে নেমে যখন দুই শর ওপর রান করি, তখন আমাদের মধ্যে একটা ইতিবাচক অনুভূতি চলে আসে। সেদিন বলে সুইংও হচ্ছিল। তবে জেতার আশা করাটা কঠিন ছিল। কারণ, পাকিস্তান খুবই ভালো দল ছিল। পরে যখন একে একে উইকেট পড়তে থাকল, ওদের মূল ব্যাটসম্যানরা আউট হতে লাগল, তখন আমাদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে। বিশেষ করে যখন ওয়াসিম আকরাম আউট হয়ে যায়, তখন থেকে। পুরো দলেরই আসলে ওই জয়ে অবদান ছিল। তবে নতুন বলে উইকেট নেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেলিম মালিকদের মতো ব্যাটসম্যানকে আউট করাটা অবশ্যই বিশেষ কিছু।

নর্দাম্পটন কাউন্ট্রি গ্রাউন্ড, বিশ্বকাপে নবাগত বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ২২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছে সাঈদ আনোয়ার, শাহীদ আফ্রিদি, ইনজামামুল হকদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইনআপের পাকিস্তান। তবে সেদিন মামুলি লক্ষ্যের মতোই বাংলাদেশের বোলিং এর সামনে মামুলি হয়ে গিয়েছিলো পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন।

১০২ রানেই শেষ ৭ উইকেট, জয়টি যখন শুধুই উদযাপনের দুরত্বে অবস্থান করছিলো তখনই একটি বাঁধ তৈরির চেষ্টা পাকিস্তানের। মঈন খান, সাকলাইম মুস্তাকদের তৈরি সেই বালির বাঁধের শেষ বাঁধা ওয়াকার ইউনিস নন স্ট্রাইকে, স্ট্রাইকে তখন শোয়াইব আখতার৷

নাইমুর রহমান দুর্জয়ের বলে অফ সাইডে গ্যাপে ঠেলে দিয়ে শোয়াইব আখতারের দৌড়, অন্য প্রান্ত থেকে ওয়াকার ইউনিসের দ্রুত সাড়া। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাব হোসেন অপির স্লাইডিং ফিল্ডিং ও থ্রো থেকে খালেদ মাসুদ পাইলটের দ্রুত স্টাম্প ভেঙ্গে দেয়াটা ভেঙ্গে দিয়েছিলো পাকিস্তানের লক্ষ্যও।
ভেঙ্গে গিয়েছিলো কাউন্ট্রি গ্রাউন্ডের গ্যালারিতে লাল সবুজের পতাকাসহ অপেক্ষারত দর্শকদের বাঁধও। রান আউট নিশ্চিত হবার আগেই সবুজ ঘাসের মাঠ দখলে নিয়েছিলো লাল সবুজের পতাকাবাহীরা।

দর্শকদের জোয়ারে মাঠের দখল হারানো মাঠের সেনাদের মধ্য থেকে একজন সেনা সেদিন সবার আগেই ড্রেসিংরুমে পৌঁছে গিয়েছিলো। তবে তার আগেই দখল হারানো মাঠের রাজত্ব কায়েম করেছিলো সেই সেনা। ব্যাট হাতে তার ৩৪ বলে ৩ চারে ২৭ রানের ইনিংস লাল সবুজকে পৌঁছে দিয়েছিলো লড়াকু লক্ষ্যে। আর বল হাতে তার ইন সুইং এ একে একে পরাস্থ হয়েছিলো শাহীদ আফ্রিদি, ইনজামামুল হক ও সেলিম মালিকরা। শক্ত ব্যাটিং অর্ডারকে বালির বাঁধই বানিয়ে দিয়েছিলেন সেদিনকার সেই খালেদ মাহমুদ সুজন।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here