দৈনিক সমাজের কন্ঠ

ডুমুরিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক বোরো ধান উৎপাদন, কৃষকের মুখে হাসি

রাশিদুজ্জামান সরদার ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধিঃ দিগন্ত জোড়া সোনালী ধানের ক্ষেত। পাকা ধানের শীষ দুলছে বাতাসে। ধানের ঘ্রাণে মৌ মৌ চারিদিক। খুলনার মাঠে মাঠে ধুম পড়েছে বোরো ধান কাটার। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ধান কাটা চলবে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। খুলনা জেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগ বোরো ধান চাষের জন্য যাদের প্রণোদনার আওতায় প্রদশর্ণী দিয়েছিল সে সব জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে বোরো উৎপাদন এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফলন হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় এবার ৬৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলাতে আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে উফসী জাতের ৮ হাজার ২০০ হেক্টর ও হাইব্রিড জাতের ১৩ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রণোদনার আওতায় যারা বোরো আবাদ করেছিলেন সেসব প্রদর্শণী ক্ষেতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি ব্লকে ধান কাটার মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে আটলিয়া, চুকনগর,মালতিয়া, মাগুরাঘোনা, খর্নিয়া, মেছাঘোনা, হাজিবুনিয়া,মাগুরখালী, সহ ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাঠ দিবস ও শষ্য কর্তণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব ব্লকে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হযেছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বোরো ধানের গড় উৎপাদন হয় প্রতি হেক্টরে ৬ মেট্রিক টন। তবে এসব মাঠ দিবসে ধান কেটে মাড়াই করে দেখা গেছে গড় উৎপাদন হেক্টর প্রদি ৬ দশমিক ১২ মেট্রেক টন। এই উপজেলায প্রণাদনা দেয়া হয় হাইব্রিড জাতের ধানের চাষে ৬ হাজার ৫০০ জন কৃষককে এবং উফসী জাতের ধান আবাদে ৫ হাজার কৃষককে।

উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রাম ব্লকের কৃষক গোপাল চ্যাটার্জী জানান, চলতি বছর বোরো আবাদে তেমন কোন রোগ বালাই দেখা যায়নি। কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক আমাদের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ দিয়েছেন। আমার ধান বেশ ভাল হয়েছে।

আটলিয়া ইউনিয়নের ব্লকের কালাম গাজী,হামিদুর মোড়ল, সিরাজুল সরদার, আব্দুল হালিম, আরসাফ সরদার, সহ বলেন, বোরো ধান সেচ নির্ভর। তিনি জানান মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় সেচের পরিমাণ কিছুটা কম লেগেছে। ধানের ফলন ভাল হয়েছে।

টোলনা ব্লকের কৃষক আকতার হোসেন বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের তদারকি ও পরামর্শের ফলে আমাদের বোরো ক্ষেতের তেমন রোগের আক্রমণ হয়নি। তাই ফলনও আশানুরূপ হয়েছে।

উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার তুষার কান্তি মন্ডল জানান, গত মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক বিলে কৃষকের আমন আবাদ ও চিংড়ি চাষের জন্য বিলে নদী থেকে নোনা পানি প্রবেশ করায়। বোরো ধান নোনা সহ্য করতে পারে না। তাই কিছুকিছু বিলে সামান্য রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। কিন্তু বর্তমানে সে সব ধান ক্ষেতের কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে রোগ দমন করা হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন জানিয়েছেন, সব প্রতিকুলতা কাটিয়ে বোরো ধানে এবার আশানুরূপ ফলন হয়েছে। যেখানে গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টন ধরা হয় সেখানে আমারা নমুনা শষ্য কর্তনের মাধ্যমে পেয়েছি গড় উৎপাদন হযেছে হেক্টর প্রতি ৬ দশমিক ১২ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, বর্তমানে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনে প্রচন্ড গরম আর রাতে কুয়াশাসহ শীতের আভা এতে বোরো ধানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা চাষীকে সার্বিক বিষয়ে সতর্ক করছি। কোন রকম যাতে রোগের বিস্তার না ঘটে এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তারা যাতে পরামর্শমত ধানের পরিচর্যা করেন সে জন্য উপ-সহকারি কৃষি অফিসারদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, জেলায় এবার ৬৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলাতেই বেশি। তিনি বলেন, বৈরি আবহাওয়া ও নোনা আক্রান্ত হওযা কিছুকিছু বোরো ক্ষেতে রোগের আক্রমণ দেখা দিলেও সেটি নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, রোগে আক্রান্ত বোরো ক্ষেতের পরিমাণ শতকারা হারের দশমিক ৫১ ভাগ। তিনি বলেন, বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে বোরো ধানের এবার টার্গেটের অধিক ধান ঘরে উঠবে বলে আশা করছি।