রাশিদুজ্জামান সরদার ডুমুরিয়া, খুলনা প্রতিনিধিঃ
বেগুনকে শীতকালীন সবজি বলা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে সারা বছরই বেগুন পাওয়া যায়। দেশে বিভিন্ন জাতের বেগুন পাওয়া যায়। এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, যা চোখের জন্য খুব উপকারী।এই ডিজিটাল যুগে আমাদেরকে চোখের পরিশ্রম করতে হয় খুব বেশি। এতে চোখের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেগুন আপনার চোখ ও ত্বকের জন্য বয়ে আনবে সুফল।বেগুনে আছে মরণব্যাধি ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক, সেই বেগুন এখন চাষ হচ্ছে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে, বেগুনের চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে কৃষকদের ,বিশেষ করে ডুমুরিয়া উপজেলার ৫নম্বর আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর , বরাতিয়া,গোবিন্দকাটি গ্রামের কৃষকদের। তারা বিষমুক্ত বেগুন চাষ করে প্রতিবিঘা জমিতে এক মৌসুমে ৩-৪ লক্ষ টাকা বিক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছে। সরজমিনে দেখা যায় গোবিন্দকাটি ইমরান হোসেন লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের ২২ শতক জমিতে বেগুনের চাষ করেছে। যার প্রতিটা গাছে বর্তমানে ১০-১৫টি বেগুনের ফলন ধরেছে। তিনি জানায় এ বেগুন গাছ রোপণের মাত্র এক থেকে দেড় মাস পর প্রথমবার প্রায় ৩মণ বিষমুক্ত বেগুন উত্তোলন করেছেন তিনি।
৫দিন পর ৬মণ বেগুন উত্তোলন করেন এবং তার ৬দিন পর ৮মণ বেগুন উত্তোলন করেছেন। ইমরান আরো জানায় বর্তমানে পাইকারি বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা অথ্যাৎ প্রতিমণ বেগুন ১৪শত’ টাকা দরে ব্যাপারিদের কাছে বিক্রয় করছেন। ৫দিন পর,পর বেগুন তোলা হয়।
এছাড়া বরাতিয়া গ্রামের মিঠুন সরকার তার ২০শ শতক জমিতে , গোবিন্দকাটি গ্রামের শহীদুল্লাহ এক বিঘা জমিতে, মনিরুজ্জামান রাজু ৩বিঘা জমিতে, হাবিবুর রহমান ২০শতক জমিতে, কার্তিক মল্লিক ,২২শতক জমিতে, বজলুর রহমান, একবিঘা জমিতে বারি ও বিডি জাতের বেগুনের বীজ, লাগিয়েছেন, এই জাতের বেগুন বীজ লাগালে
বিষমুক্ত বেগুনের চাষ করতে সফল হওয়া যায় ও অল্প সময়ে বেগুন ফসল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করা যায়।
মনিরুজ্জামান রাজু আরো জানান সবজির পুষ্টি ও গুনগত মান ঠিক রাখতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যাতিরেকে বালাই দমনে জৈব বালাই নাশক ব্যাবহার করছেন। এর পাশাপাশি বালাই বিস্তার রোধে ব্যাবহার করছেন সেক্সফেরোমন ফাঁদ।
এই ফাঁদে সাদা টবের নিচের অংশে ভিতরে রয়েছে ডিটারজেন্ট মিশ্রত পানি। উপর অংশ ভিতরে বিশেষ কায়দায় পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে স্ত্রী পোকার গন্ধ মিশ্রণ পাউডার! ফলে স্ত্রী পোকার আকর্ষনে পুরুষ পোকা দ্রুত টবের ভিতর প্রবেশ করা মাত্র পানির মধ্যে পড়ে মারা যায়। এতে পোকামাকড়ের বংশ বিস্তার রোধে সহায়ক ভুমিকা রাখে। আর এর ফলে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যাবহারের মাত্রা ৭০ শতাংশ হ্রাস পায়। এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি দপ্তরের দিক নির্দেশনায় কৃষক মনিরুজ্জামান রাজু, ইমরান হোসেন, আব্দুল মান্নান ঢালীসহ উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষক সেক্সফেরমন ফাঁদ ও জৈববালই নাকশ ব্যাবহার করে সবজি উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা সফল হয়েছেন। চলতি মৌসুমে বেগুনের বাজার মুল্য ভালো থাকায় অধিক লাভবান হবেন, বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন কৃষক মনিরুজ্জামান রাজুসহ চাষিররা।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন জানান,আমরা উপজেলার প্রায় একশ’ জন কৃষককে বারি ও বিডি জাতের বেগুনের বীজ সম্প্রসারণের কাজ করেছি। তারই ফলশ্রুতিতে গোবিন্দকাটি গ্রামের কয়েক জন কৃষককে এ জাতের বীজ দেয়া হয়েছে। এ বেগুনের চাষ করলে জমিতে কীটনাশক অনেক কম লাগে। ফলন হয় অনেক বেশি। তাই আগামীতে আমরা উপজেলার প্রত্যেক কৃষকের কাছে এ জাতের বেগুনের বীজ পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। কৃষি অফিসার আরো বলেন ডুমুরিয়া কৃষকরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছেন। আধুনিক প্রযুক্তিতে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে সবজি উৎপাদন হচ্ছে। বালাই দমনে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যাতিরেকে সেক্সফেরমণ ফাঁদ ও জৈব বালাই নাশক ব্যাবহার করে বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।