দৈনিক সমাজের কন্ঠ

ডুমুরিয়ায় শোল মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী লক্ষ্ণী মন্ডল

রাশিদুজ্জামান সরদার, ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি:

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের মাদারতলা গ্রামে শোল মাছের চাষ করে  সাফল্য অর্জন করেছেন লক্ষ্ণী মন্ডল ।
২০২১-২০২২ আর্থিক সালে রাজস্ব বাজেটের আওতায় দেশীয় প্রজাতির শোল মাছের প্রদর্শনী বাস্তবায়নের মাধ্যমে শোল মাছের চাষ সম্প্রসারণের জন্য  লক্ষ্ণী মন্ডল কে মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যম প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ও প্রদর্শনী বাস্তবায়নের জন্য প্রণোদনা হিসেবে পোনা ও মাছের খাদ্য প্রদান করা  হয়। তার প্রদর্শনী পুকুরের আয়তন মাত্র ১২ শতক, মজুদকৃত পোনার পরিমান- ৪,০০০ টি,পোনা বাঁচার হার ছিলো শতকরা ৮০ ভাগ।  বর্তমানে প্রতিটি মাছের গড় ওজন ৭০০-৮০০গ্রাম।
আনুমানিক মোট ব্যয় – ২.০০ লক্ষ টাকা। মাছ বিক্রি করে সাম্ভাব্য আয় হবে ৮.০০ লক্ষ টাকা। আশা করা য়ায় ৬.০০ লক্ষ টাকা লাভ হবে। চাষের মোট সময় ২১০ দিন।

বাড়ীর আঙ্গীনার পুকুরে দেশি জাতের শোল মাছের চাষ করেন লক্ষ্ণী মন্ডল। কম খরচে এক বছরে ১২ শতক জল আয়তনে শোল মাছ উৎপাদন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

লক্ষ্ণী মন্ডলের সাফল্য দেখে তার আশপাশের  অনেক যুবক কৈ, চ্যাং (টাকি), শোল, চিতলসহ বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।’

লক্ষ্ণী মন্ডল বাড়ীর কাজের পাশাপাশি  বিলুপ্তপ্রায় চ্যাং (টাকি), কই, চিতলসহ দেশীয় মাছের প্রজাতি টিকিয়ে রাখতেও কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘কীটনাশক ও সার ব্যবহারের ফলে কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, শাল চোপরা, শোল, বোয়াল, আইড়, বাইন, খলিসা,  চিংড়ি, গজার,  চেং, টাকি, চিতলসহ দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনি ২০২১ সালে মৎস্য দপ্তরে যান। মৎস্য দপ্তরে তার আগ্রহের কথা জানান এবং প্রশিক্ষণ পাওয়ার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করে আসেন। এক মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণের জন্য ডাক পান। লক্ষ্ণী মন্ডল বলেন প্রশিক্ষণে আমি আমার বাড়ীর আঙ্গিনার ছোট্র এই পুকুরটির কথা বললে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার আমাকে শোলমাছ চাষের জন্য বলেন। এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত পরিকল্পনা করি। তিনি আমাকে একটি প্রদর্শনী দেন এবং আমি মৎস্য দপ্তর হতে ৪০০০ টি শোল মাছের পোনাসহ ২৫০০০ টাকার উপকরন পাই।

এই দেশের মতো মাটি এবং পানি কোথাও নেই উল্লেখ করে লক্ষ্ণী মন্ডল বলেন, শোল মাছগুলোকে আমি খুব ভালোবাসি। মমতা দিয়ে দেশি মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছি। প্রথমে আমাকে মৎস্য দপ্তর ছাড়া কেউ উৎসাহ দেননি। আজ আমি সফল।

এখন অনেকে এই দেশি মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ছে। দেশি মাছ চাষে খরচ কম লাভ বেশি। মানুষের কাছেও প্রিয় এই মাছগুলো।’

শোল মাছ চাষ সম্পর্কে লক্ষ্ণী মন্ডল বলেন, ‘এই অঞ্চলের মাছ চাষিরা যেসব মাছ চাষের প্রতি ঝুঁকছে তাতে ঝুঁকি আছে এবং খরচও বেশি। কিন্তু তারা বোঝে না দেশীয় মাছ চাষে বেশি কষ্ট করা লাগে না। মানুষ যাকে পুকুরের অন্যান্য মাছের জন্য শত্রু মনে করেন আমি তাকে বন্ধু ভেবে নিয়েছি। এর নার্সিং  কিংবা একটু বড় হলেই পোনা লালনের দায়িত্ব মা মাছটির। এজন্য বাড়তি কোনও কাজের দরকার পড়ে না।’ তিনি আরও জানান, ‘দেশীয় মাছ চাষ করতে পুকুরে কোনও সার দেওয়া দরকার হয় না। চুন কিংবা কোনও রাসায়নিক খাবারও নয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মাছগুলো বেড়ে ওঠে। বাজারের ছোট মাছই এর প্রধান খাদ্য। সকাল-বিকাল খাবার দিতে হয়।’ ধীরে ধীরে বোয়াল, আইড়, গজারসহ সব দেশি মাছ চাষ করবেন বলে তিনি জানান।

ডুমুরিয়া  সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আবুবকর সিদ্দিক বলেন, লক্ষ্ণী মন্ডলের শোল মাছ চাষে উপজেলা মৎস্য  দপ্তর সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
বৃহঃবার প্রদর্শনীটি পরিদর্শন করে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল
বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে  মতো অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষ্ণী মন্ডলের
পথ অনুসরণ করলে আমরা যেমন আমাদের মাছের চাহিদা পূরণ করতে পারবো, তেমনি এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। সমাজ থেকে বেকারত্ব বহুলাংশের দূর হবে।