দৈনিক সমাজের কন্ঠ

নবীগঞ্জে লাল সবুজের ফেরিওয়ালাদের পথচলায় উড়ছে বিজয়ের নিশান

মোঃ হাসান চৌধুরী :
নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি –

নবীগঞ্জ উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলছে লাল সবুজের পতাকা বিক্রি। ফেরিওয়ালাদের কাঁধে নানা আকারের জাতীয় পতাকা। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে এই জাতীয় পতাকা মানুষের হাতে হাতে পৌছে দিতে কেউ কেউ পরিভ্রমণ করছেন মাইলের পর মাইল।এ যেন আত্মার টান। দেশের এক প্রান্ত থেকে হেঁটে অন্য প্রান্তের নানা পেশা নানা বয়সীর মানুষের হাতে পৌছে দিচ্ছেন এ লাল সবুজের পতাকা। চারদিকে লাল সবুজের ফেরিওয়ালাদের পথচলায় উড়ছে বিজয়ের নিশান।তেমনি এই পতাকা বিক্রি করতে সুদুর বি’বাড়িয়া থেকে নবীগঞ্জে এসেছেন দুই বিক্রেতা। এতটা পথ পিছনে ফেলে এসে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করছেন আবেগের এই পতাকা। এই পতাকা কাঁধে নিয়ে তারা কেবল জীবিকার পথই বেছে নেননি,এ পেশার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে দেশপ্রেম,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। এ বিষয়ে কথা হয় পতাকা বিক্রেতা যুবক মোঃ রাহিম মিয়া সাথে। তিনি গর্ব করে জানান,ডিসেম্বরের শুরুতেই এই এলাকায় জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে এসেছি। সবখানেই জাতীয় পতাকার চাহিদা বেশী। দেশের মানুষ এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।সবাই এখন লাল-সবুজের ফিতা কিনতে আগ্রহী। তিনি আরও জানান,সংসারের অভাবের কারণে পড়ালেখাও করতে পারিনি। আমাদের এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সংগ্রাম ও যুদ্ধের গল্প শুনেছি অন্যদের মুখে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। ২ লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে এই মুক্তিযুদ্ধে। এত কিছুর বিনিময়ে যে পতাকা,সে পতাকা বিক্রি করতে পারাটাও সম্মানের ব্যাপার। তিনি জানান,৬ ফুট বাই সাড়ে ৩ ফুট একটি পতাকা বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিটি ১ ফুট স্টিক পতাকার দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। ৫ ফুট বাই ৩ ফুট পতাকার দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। হাত ও মাথার ব্যান্ড ১০ থেকে ২০টাকায় বিক্রি করেন তিনি। পতাকা বিক্রেতা আরো জানান,অন্য সময় তিনি পলিথিন ব্যাগ থেকে শুরু করে রাজমিস্ত্রির কাজও করেন। এখন হাতে কোনো কাজ না থাকায় পতাকা বিক্রি করছেন। বিক্রি কেমন হয় জানতে চাইলে জানান,সকাল ৯টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিনে বিভিন্ন আকারের ১৪ থেকে ১৫টা পতাকা বিক্রি করা যায়। দিনশেষে ৭শ থেকে ৮শ টাকা আয় করা যায়। এটা দিয়েই পরিবার নিয়ে কোনো মতে সংসার চালানো যায়।
এসব পতাকা যারা বিক্রি করেন তারা সবাই মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা। সারাবছর অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন দিবস এলেই নেমে পড়েন পতাকা বিক্রিতে।
বিজয় দিবস,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নবীগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে যায় লাল সবুজের পতাকা। বিশেষ করে ডিসেম্বরের বিজয়ের মাস ও উত্তাল মার্চ মাসের স্বাধীনতা দিবস এলেই বাঙ্গালীর মনেপ্রাণে জেগে উঠে দেশাত্ববোধ।পতাকার বর্ণিল ভালোবাসায় শিহরিত হয়ে উঠে সবকিছু। শুধু জাতীয় পতাকা নয়,পোশাক পরিচ্ছেদেও দেখা যায় লাল সবুজের ছোঁয়া। আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক লাল সবুজে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে পুরো জাতি। এ পতাকা আমাদের শেখায় দেশ ও জনগনের পক্ষে কথা বলার। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের পরিচিত করে স্বাধীন সার্বভৌম ও অকুতোভয় জাতি হিসেবে তোলে ধরার ও সাহস যোগায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।