দৈনিক সমাজের কন্ঠ

নবীগঞ্জে র‍্যাবের এএসপি শামীমের আন্তরিকতায় পরীক্ষা দিতে পারলো হৃদি

হাসান চৌধূরী : নবীগঞ্জ প্রতিনিধি –

র‍্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের মহানুভবতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেলো নবীগঞ্জের শিক্ষার্থী হৃদি।শনিবার সকালে সময় স্বল্পতার কারনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বঞ্চিত হবার শঙ্কায় পড়া এই পরীক্ষার্থী ও তার অভিভাবককে নিজ গাড়িতে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেন এ র‍্যাব কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানান, সকালে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর চাপে শহরে যানবাহনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। আর যানবাহন পেলেও এসময়ে ভীড় ঠেলে সময়মতো কেন্দ্রে পৌছানো অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবককে অসহায় অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় সিলেট মহানগরীতে র‍্যাবের দায়িত্বরত ছিলেন র‍্যাব -৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
পরীক্ষার্থীর অসহায়ত্ব দেখে তার নিজ সরকারি গাড়িতে করে তিনি পরীক্ষার্থী হৃদিসহ অনেককে নিজনিজ কেন্দ্রে পৌছে দেন। তার মহানুভবতায় নিশ্চিত বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছেন নবীগঞ্জের হৃদি সহ আরো বেশ কয়েক শিক্ষার্থী।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যাপক ও ভর্তি পরীক্ষার্থী হৃদির অভিভাবক রফিকুল ইসলাম র‍্যাবকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি আমার মেয়েকে সময়মতো কেন্দ্রে পৌছানোর ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে এএসপি সাহেব সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার মেয়েকে অনেক বড় জটিলতা থেকে রক্ষা করেছেন।
জানতে চাইলে র‍্যাব-৯ এর এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের অসহায়ত্ব দেখে আমার নিজের ভর্তি পরীক্ষার দিনটির কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। দেখলাম যে, এই পরিস্থিতিতে সাইরেন বাজানোর সুবিধা থাকায় একমাত্র সরকারি গাড়ির পক্ষেই সম্ভব তাদেরকে সময়মত কেন্দ্রে পৌছে দেওয়া। তাই দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এ চরম দুঃসময়ে সাড়া দেওয়া হতে নিজেকে বিরত রাখতে পারিনি।
এদিকে র‍্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি সম্বলিত একটি পোষ্ট করেন।
পাঠকদের জন্য পোষ্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ
”নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার ভর্তিপরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সত্তর হাজার আগন্তুকের ভারে ভারাক্রান্ত ছোট্ট বিভাগীয় শহরটির রাস্তাভর্তি জ্যাম। এদিকে ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রে প্রবেশের সময় বাকি আর মাত্র ১০ মিনিট। যে গাড়িতেই চড়ুন, এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছার চেষ্টা করা অসম্ভবের পেছনে ছোটারই নামান্তর। বাবার মনে হয়ত বিষাদমাখা শঙ্কার কালো মেঘ, এতদূর থেকে এসেও শেষপর্যন্ত মেয়েটির আর ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেওয়া হল না!
“স্যার, তাড়াতাড়ি উঠাই, না হলে আমরা টাইম কাভার করতে পারব না” আমার বডিগার্ড হাসান এই কয়দিনেই সম্ভবত আমার ভাবনার জগতের নাড়িনক্ষত্রের খোঁজ পেয়ে গেছে। আমি কি চিন্তা করছি- মুখ খুলে বলার আগেই সে কিভাবে কিভাবে যেন সব বুঝে যায়। নেমে ইশারা দিতেই বাবা- মেয়ে গাড়ির পেছনে উঠে বসল। ড্রাইভারকে ইমার্জেন্সি সাইরেন বাজিয়ে দিতে বলে প্রায় লাফিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম আমিও। র‍্যাবের সাইরেন আর ড্রাইভার ইউসুফের প্রাণান্তকর চেষ্টায় যখন কেন্দ্রে পৌঁছেছি, গেট বন্ধের ঘন্টা পড়তে তখন আর বাকি মাত্র আধা মিনিটেরও কম। গাড়ি থেকে নেমেই গেটের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতেই বাবা একবার পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। কে জানে, ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই কিনা! আমি তাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পালটা ইশারায় দ্রুত গেটের দিকে যাওয়ার তাগাদা দিলাম। হাতে সময় যে খুবই কম!”
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার সকাল–বিকাল দুই শিফটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।