দৈনিক সমাজের কন্ঠ

ভারতের ত্রিপুরায় মুসলিম নির্যাতন, লুটপাট ও মসজিদে আগুনঃ বাংলাদেশ নিরব

ডেস্ক রিপোর্টঃ গত ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনায় নিরব রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনা রয়েছে এবং মাঝেমধ্যেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাধছে বলে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রটেকশন অব সিভিল রাইটসের (এপিসিআর) সদস্য নুরুল ইসলাম বড়ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সব তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারব। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এটা বুঝেছি, অন্তত তিনটি মসজিদে আগুন লাগানো হয়েছে। গোটা দশেক মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদগুলোর মধ্যে উনকোটি ও সিপাহীজলা জেলায় একটি করে মসজিদ রয়েছে বলে জানান তিনি।

পানিসাগর শহরের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের খবরকে ‘ভুয়া’ বলেছে পুলিশ। ত্রিপুরা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইনশৃঙ্খলা) সৌরভ ত্রিবেদী কয়েক দিন আগে বলেন, দেশবিরোধী দুষ্কৃতকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রকাশ করছে। পানিসাগর নিয়ে যে ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে পানিসাগরের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো মসজিদে আগুন লাগানো হয়নি।
পুলিশের এই বক্তব্যকে সঠিক বলেছেন উনকোটি জেলার একজন স্কুলশিক্ষক।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ, প্রচারমাধ্যম ও হিন্দু সংগঠনের তরফে বারবার বলা হচ্ছে, পানিসাগরের ঘটনাটি নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে বেশ কিছু মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ করা হচ্ছে না।

পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেন ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কৈলাসহর থানার উল্টো দিকে মুসলিম সমাজের ২০০-২৫০ মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কারণ, একটু আগে স্থানীয় স্কুলে সংঘাত হয়েছে। রোজই কোথাও না কোথাও সংঘাত হচ্ছে। বাড়িঘর, দোকানপাট পুড়ছে। কিন্তু পত্রপত্রিকায় কোথাও কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে না।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের জেরে ত্রিপুরায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনসহ সব দলই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করছিল। সেই মিছিল থেকে দোকানপাট, বাড়িঘর ইত্যাদির ওপরে হামলা চালানো হয়, মসজিদেও ভাঙচুর করা হয় বলে স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী, এই সময় প্রশাসন হামলাকারীদের থামায়নি, ফলে আক্রমণের তীব্রতা বেড়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কারও প্রাণহানি হয়নি বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

বাম-মনস্ক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপরে আক্রমণের ঘটনায় ত্রিপুরায় যেভাবে প্রতিবাদ হয়েছে, তার অংশবিশেষ প্রতিবাদও এখন এই রাজ্যে হচ্ছে না। ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যুৎ মানিক্য দেববর্মন বলেছেন, ত্রিপুরায় কী ঘটছে, তা জানতে মানুষ গভীরে গিয়ে কিছু দেখছে না। কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট দুই পক্ষই এখন চুপ করে রয়েছে।

এর কারণ হিসেবে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেন, সব দলই ভয় পাচ্ছে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে। কারণ, ত্রিপুরায় মুসলমান জনসংখ্যা ও ভোট ১০ শতাংশের নিচে। সংখ্যালঘুদের হয়ে কথা বললে সংখ্যাগুরু অর্থাৎ হিন্দুদের ভোট বিপক্ষে চলে যাবে, যা ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে সবাই চুপ। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসও রয়েছে, যারা এত দিন এখানে বিরাট বিজেপিবিরোধী আন্দোলন করার চেষ্টা করছিল।

ত্রিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি বদরুজ্জামান এই ঘটনাকে হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখছেন। কোথায় ও কীভাবে মুসলমানদের ওপরে আক্রমণ হয়েছে, তা নিয়ে একটি বিস্তৃত হিসাব দিয়েছেন তিনি। অন্তত ৩০০ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে কৈলাসহরের উত্তর অংশে আশ্রয় নিয়েছে বলে বদরুজ্জামান জানিয়েছেন। সূত্র: প্রথম আলো