মিত্রবাহিনীর শহীদদের স্মরণে বাঘারপাড়ার খাজুরায় স্মৃতিসৌধ

0
0

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি –  যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা ও এর আশপাশের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ দিনের দাবি অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। খাজুরায় রাজাকারদের হাতে নিহত মিত্রবাহিনীর ছয় সদস্য স্মরণে  নির্মিত হচ্ছে সৌধ। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে নির্মাণকাজের ঠিকাদার জানিয়েছেন।

সরকারের এ কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এখানকার সাধারণ মানুষ। যে স্থানে রাজাকারদের গুলিতে মিত্রবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন তার পাশেই স্কুলের দেওয়া পাঁচ শতক জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে স্মৃতিসৌধটি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে এটি নির্মিত হচ্ছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে রাজাকাররা মিত্রবাহিনীর ছয় সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আহত হন অপর এক সদস্য। পরে মিত্র বাহিনী রাজাকারদের ক্যাম্প ধ্বংস এবং তাদের প্রত্যেককে হত্যা করে। ঠিক ওই স্থানেই নির্মাণ করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ায় পরদিন সকালে ট্যাংক-গাড়িবহর নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছিলেন মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। পথে তাঁরা খবর পান খাজুরায় রাজাকার ক্যাম্পে মিত্রবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এরপর সেখানে অভিযান চালিয়ে ওই এলাকাকে  রাজাকারমুক্ত করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে  থেকেই খাজুরা এমএনমিত্র (মনিন্দ্র নাথ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একপাশে রাজাকাররা ক্যাম্প তৈরি করে। খাজুরার মথুরাপুরের ইব্রাহিম ডাক্তারের নেতৃত্বে রাজাকাররা সেখানে নৃশংস কর্মকাণ্ড  করতো। যুদ্ধ শুরুর পর তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য এবং  নিরীহদের ধরে এনে হাত-পা বেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাশের  চিত্রা নদীতে ভাসিয়ে দিত। আশপাশের লোকজনের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ধরে এনে জবাই করে খেত। নারীদের সম্ভ্রম লুট করতো। আমরা কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হই।

স্মৃতি হাতড়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘একদিন রাতে আমরা ওমেদ আলীর হলদিবাগানে অ্যাম্বুশ করি। আমাদের কাছে খবর ছিল, রাজাকাররা ধান্যখোলা যাবে। কিন্তু কে বা কারা বিষয়টি ইব্রাহিম রাজাকারকে জানিয়ে দেয়। তখন অতর্কিতে রাজাকাররা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে বাঘারপাড়ার খাজুরা এলাকার পান্তাপাড়া গ্রামের মাজিদ শহীদ হন। পায়ে গুলিবিদ্ধ হন আতিয়ার নামের  আরো এক মুক্তিযোদ্ধা। পরে আমরা গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসি।’

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ওইদিন কৌশলে ইব্রাহিম ডাক্তার সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে অবশ্য তাঁকে নিমটা এলাকা থেকে ধরে আনেন মুক্তিযোদ্ধারা। চুন-কালি আর জুতার মালা পরিয়ে গোটা বাজার ঘুরানোর পর তাকে হত্যা করা হয়।

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধে খাজুরায় মিত্রবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হওয়ার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্মৃতি অম্লান রাখার উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার খাঁ বলেন, তাঁদের যে বলিদান, সেই ঋণ শোধ হওয়ার নয়। তবে, আগামী প্রজন্ম যাতে তাঁদের জীবনদানের কাহিনী জানতে পারে, সেই লক্ষ্যে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ দরকার।

শহীদ মিত্র ও মুক্তিবাহিনী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক গোপীকান্ত সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, এখানে একটি স্মৃতিসৌধের জন্য আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে আবেদন নিবেদন করে আসছি। ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিনকে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এনে তাঁকে দিয়ে আমরা স্মৃতিফলক উন্মোচন করাই। দীর্ঘদিন পর আমাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here