মোঃ মহিদুল ইসলাম – যশোরের চৌগাছায় ড্রাগন চাষে ভাগ্য ফিরলো (অবঃ) প্রাপ্ত নায়েব শহিদুর রহমান (৬৮) নামের এক ভূমি কর্মকর্তার। ইতি মধ্যে তিনি উপজেলায় ড্রাগন চাষে একজন সফল চাষী হিসাবে সুনাম অর্জন করেছেন।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ড্রাগন চাষি শহিদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে।
তিনি বলেন চাকুরী জীবন কাটিয়েছি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব হিসাবে। ২০১৩ সালে চাকুরী থেকে সেচ্ছায় অবসর নিই এবং অবসরের পরে জিবনের ভবিষ্যৎ জীবন কিভাবে অতিবাহিত করবো তা নিয়ে ভাবি। ঠিক ঐ সময় আমার বন্ধু আমাকে স্টক বিজনেস কিংবা রড, সিমেণ্টের ব্যবসা করতে বলে। কিন্তু আমি ভিন্ন কিছু করতে চাই। কারণ আমি বসে থাকা কাজ ভালোবাসি না। শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া আমি চলতে পারি না । তাই কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য নিজস্ব চিন্তা-চেতনা আসে পেয়ারা বাগান করার। তাও হয়ে উঠলো না এক জায়গায় ৮-১০ বিঘা জমি পাবার অভাবে।
২০১৬ সালের দিকে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ড্রাগন চাষ সম্পর্কে প্রতিবেদন দেখি। প্রতিবেদনটি পড়ে পেপার কাটিং সংগ্রহ করলাম। তা থেকে ইচ্ছা হলো ড্রাগন চাষের। কিন্তু ৮-১০ বিঘা জমি একত্রে কোথাও লিজ পায়নি। তখন আমার ৩৭ ও ৪২ শতক করে দুই খন্ড জমিতে থাকা মেহেগনি গাছ মেরে দিলাম। প্রস্তুত করলাম ড্রাগন চাষের জন্য। একটি খন্ডে পিলার দিলাম ২৭৮ টি এবং অপর খন্ডে পিলার দিলাম ২৭৬ টি।
খরচের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ঐ সময় চারার দাম বেশি ছিলো এই জন্য খরচ একটু বেশি হয়েছিলো। আবার আমার জমি উচু-নিচু ছিলো। তা সমান করতে এবং সেচ মেশিন বসাতে ও শ্রমিক খরচসহ সর্বমোট ৭৯ শতকে খরচ হয়েছিলো তিন লক্ষ টাকার মতো কিন্তু বর্তমানে চারার দাম কম হওয়ায় ঐ পরিমান ড্রাগন বাগান তৈরি করতে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হবে।
এ পর্যন্ত ড্রাগন থেকে কি পরিমান ইনকাম হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, গত বছর ৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকার ড্রাগন বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমান বছরে ৩ লক্ষ টাকার পর্যন্ত ফল বিক্রয় করেছি। এখনো তো বছর শেষ নয়। নভেম্বর পর্যন্ত ফল আসবে। সুতরাং আরও বিক্রয় সম্ভব হবে। প্রথম বছর খরচ বেশি হলেও এখন শ্রমিক, সার, সেচ ছাড়া কোনো খরচ নেই। সুতরাং এখন লাভের পরিমান অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, এই ড্রাগন চাষ আমার জীবনকে মুগ্ধ করেছে। তাই আমি আমার ড্রাগন বাগানের একশত গজ দুরে একত্রে ১০ বিঘা জমি ড্রাগন চাষের জন্য নতুন করে প্রস্তুত করেছি। সেখানেও ড্রাগন চাষ করবো। কারন চারা তো কেনা লাগবে না। নিজের জমিতে চারা আছে এবং পিলার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এবারকার ১০ বিঘাতে চাষ করতে অনেকটা বাড়তি খরচ কম হবে।
পারিবারিক ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমার তিন মেয়ে। বড় দুই মেয়ে ঢাকা থেকে পাশ করার পরে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়েটাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। তাকেও বিয়ে দিয়েছি। জামাই-মেয়েদের নিয়ে খুবই সুখে আছি। বাড়িতে এখন বুড়ো-বুড়ি দুইজন ও একজন কাজের মেয়ে আছে। ড্রাগন বাগান সহ বাড়িতে কাজের জন্য প্রতিদিন কতজন শ্রমিক কাজ করে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, গড়ে প্রতিদিন ৬-৮ জন লোক কাজ করে। ড্রাগন বাগানের কথা বলতে বলতে তিনি বলেন, আমি যখন চাকুরী করতাম তখন থেকেই বনজ ও ফলজ উদ্ভিদের প্রতি পাগল ছিলাম। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো যেনো ছিলো আমার শখ।
চাকুরীরত অবস্থায় আমার অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ আমার শখের কথা জানতেন। একবার আমার কাছে অফিস থেকে জানতে চাইলো আপনার কত প্রজাতির গাছ আছে। আমি বললাম, ৭৭ প্রজাতির। সবচেয়ে প্রধান বিষয় হলো বনজ বলেন আর ফলজ বলেন সব উদ্ভিদের প্রতি আমার অন্য রকম একটা ভালোবাসা, চাহিদা এবং শখ।