চৌগাছার ২নং পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের ভবন আজও নির্মিত হয়নি,দ্রুত নির্মানের দাবী

0
1
চৌগাছা প্রতিনিধি,  চৌগাছা(যশোর)
যশোরের চৌগাছার ২ নং পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের ভবন আজও নির্মিত হয়নি। ফলে প্রস্তাবিত জমিতে টিনসেড দিয়ে কোনরকম চলছে পরিষদের কার্যক্রম। এই অবস্থায় ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের বহুবিধ কার্যক্রম চালাতে হিমিশিম খাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন পরিষদের জমি সংক্রান্ত মামলার জটিলতার কারনে ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে আইনগত জটিলতা নিরসন পূর্বক বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত পরিষদের ভবন নির্মানের দাবী জানিয়েছেন ইউনিয়নবাসিসহ সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ২ নং পাশাপোল ইউনিয়নের অবস্থান। পাশাপোল ইউনিয়নটি ঝিকরগাছা থানার অন্তর্গত ছিল। ৩৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নের তখন নাম ছিল ফুল পাশাপোল ইউনিয়ন।
১৯৭৭ সালে চৌগাছা থানা গঠনের পর ইউনিয়নকে ভেঙ্গে দুটি ইউনিয়ন করা হয়। তা হলো ১ নং ফুলসারা ও ২ নং পাশাপোল ইউনিয়ন। বর্তমানে পাশাপোল ইউনিয়ন ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। গ্রামগুলো হচ্ছে পাশাপোল, বানুরহুদা, পলুয়া, বাড়িয়ালী, বুড়িন্দীয়া, রষুনাথপুর, মৎস্যরাঙ্গা, দশপাখিয়া, হাউলী, দুড়িয়ালী, মালীগাতী, রানীয়ালী, সুরেশ্বাসকাটি, বড়গোবিন্দপুর, গোবিন্দপুর, কালিয়াকুন্ডি ও বিল এড়োল। ইউনিয়নের আয়োতন ২৫.৯৬  কি:মি:, লোকসংখ্যা-২২২৬৮ হাজার।
ইউপি সদস্য ও দশপাখিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলামসহ স্থানীয় অনেকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মান নিয়ে দেড় যুগ ধরে মামলার কারনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপোল ইউনিয়ন অনেক পুরাতন ইউনিয়ন হলেও এখানে কোন ইউনিয়নের ভবন তৈরি হয়নি। তৎকালীন সময় নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ তাদের কাচারি ঘরে  (বৈঠকখানায়) পরিষদের কার্যক্রম চালাতেন। তাঁরা আরো বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম খাইরুজ্জামান ঝিকরগাছা থানার অধীন থাকা অবস্থায় ইউনিয়নের ৩৩টি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান নির্নয় করেন বাড়িয়ালী গ্রামকে। এই গ্রামে সরকারি ক্লিনিকের একটি কক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পাশাপোল ইউনিয়ন বিভক্ত ও চৌগাছা থানা গঠন হবার পর মধ্যবর্তী ওই স্থানের গুরুত্ব কমে যায়। পরবর্তীতে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের সহযোগিতায় দশপাখিয়া বাজার সংলগ্ন ইউনিয়ন ভবনের জন্য একটি স্থানের নাম প্রস্তাব করা হয়। একই সাথে সেখানে টিনসেড দিয়ে একটি কক্ষ তৈরি করে চালানো হয় কার্যক্রম। পরবর্তীতে পরিষদের ভবন নির্মানের কথা বিবেচনা করে এলাকার আয়ুব হোসেন, আসাদুজ্জামান, কামরুজ্জামান, হেলালউদ্দীন, জালালউদ্দীনসহ ৭/৮ জন কৃতি সন্তান ৬৬ শতক জমি দান করেন।
সাবেক ইউপি সচিব রফিউদ্দন বলেন, যেখানে জমি দান করা হয়েছে, সেখানে পরিষদের ভবন নির্মাণ হলে ইউনিয়নবাসির সুবিধা হবে। কেননা পাশাপোল মৌজায় প্রস্তাবিত ওই জমির পাশে দশপাখিয়া বাজার বিদ্যমান। পাশেই রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা অফিস, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাইমারি স্কুল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়।
ইউপি চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি দানের পর ওই জমিতে কবরস্থান আছে দাবী করে বাড়িয়ালী গ্রামের সহিউদ্দীন বাদী হয়ে আদালতে দেওয়ানি মামলা ঠুকে দেন। ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের বিষয়ে সাবেক ইউএনও ও জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রস্তাবিত স্থানকে সরজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠান। কিন্তু বাঁধ সাধে ওই মামলা। এরপর ২০১৩ সালে প্রস্তাবিত জমির পক্ষে রায় দেয়া হয়। ফলে ভবন নির্মানে আর বাঁধা থাকেনা।
তারপরও এই রায়ের বিপক্ষে বাদী আপিল করলে আদালত এবার বাদীর অনুকুলে রায় প্রদান করেন। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের পক্ষে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ ও পূর্বের অনুকুলে রায় বহাল রাখতে আমরা হাইকোর্টে আপিল করি।
তিনি বলেন, আমরা আদালতের দিকে চেয়ে আছি। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল ও প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে ইউনিয়ন পরিষদের ভবন না থাকলে কার্যক্রম চালানো যায়না। আমরা প্রস্তাবিত স্থানে টিনসেডের ভিতর কোন রকমভাবে পরিষদের কাজ চালাচ্ছি। এখানে সার্বিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি গ্রামের কাগজকে জানান, পাশাপোল ইউনিয়নে পরিষদের ভবন দরকার। আদালতে মামলা ও আইনগত কিছু সমস্যার কারনে পরিষদের ভবন নির্মান সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো যাতে দ্রুত সমাধান হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here