ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ যশোর – খুলনা মহাসড়কের নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়েছিলো ৩ দফা। সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত ২৭ কোটি টাকার বাজেটও। তার পরও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে যশোর-খুলনা মহাসড়ক। সড়কজুড়ে বড় বড় খানাখন্দ আর রাউটিং (ঢেউ)। উঠে গেছে পিচ। মোট ৩৮ কিলোমিটার সড়কের দুই-তৃতীয়াংশের অবস্থা এমনই। নির্মাণ চলাকালেই এমন বেহাল দশা হওয়ায় এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি।
সড়কটির এই বেহাল অবস্থার জন্য ওভারলোড ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ। তার ওপর সড়কসংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সমন্বয়হীনতাও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে তারা। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৭ কোটি টাকা বাজেটের পাশাপাশি প্রকল্পের সময়সীমা আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের পালবাড়ী মোড় থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়কের নির্মাণকাজের অনুমোদন মেলে ২০১৭ সালে। টেন্ডারসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের শেষ দিকে। এর মধ্যে পদ্মবিলা রাজঘাট হয়ে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারের ১৪৭ কোটি টাকার কাজ ঠিকা নেয় ‘তমা কনস্ট্রাকশন’। অবশিষ্ট ১৯ কিলোমিটারের কাজ পায় ‘মাহবুব ব্রাদার্স’। দুটি প্যাকেজে মোট ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুন মাসে। কিন্তু করোনা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী কাজটি শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু বেহাল দশার কারণে সর্বশেষ মহাসড়কটি নির্মাণ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত ২৭ কোটি টাকা বাজেটও।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নির্মাণকাজ চলমান থাকা অবস্থাতেই ২০১৯ সালের শেষ দিকে মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় ঝুঁকিপূর্ণ রাউটিং। বৃষ্টিতে ওই রাউটিংগুলো বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার পর এই আট মাসে মহাসড়কটির অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল মাহমুদ জানান, পদ্মবিলা থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। কাজ চলাকালীন এখানে পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া ১৭ কিলোমিটার রাস্তার বড় অংশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু-নিচু ঢেউ (রাউটিং)। দিনদিন এ অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে।
ওভারলোড ও ক্রিপ রোডের কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে দাবি যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেনের। তিনি বলেন, মহাসড়কটির আপার খুলনা অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। কেননা, অভয়নগর একটি বাণিজ্যিক এলাকা। তা ছাড়া সেখানে নদীবন্দরও আছে। প্রতিদিন সেখান থেকে সহস্রাধিক ট্রাক যাতায়াত করে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ওই ট্রাকগুলোর প্রায় সব কটিতেই থাকে ওভারলোড পণ্য। এ ছাড়া বাজার, রেলক্রসিং ও স্পিড বেকারের কারণেও রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেননা, গাড়ি যত ব্রেক করবে, ততই রাস্তার পিচ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি লোড গাড়ি এক স্থানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে রাস্তা ক্ষতির মুখে পড়ে। তেমনি ওই দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কারণে বহির্পাশের রাস্তা অত্যধিক ব্যবহৃত হয়েও তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পিচের ওপর দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকলেও সড়কের ক্ষতি হয়।
প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম বলেন, `এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি, কিন্তু তারা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। রাস্তা সংরক্ষণ শুধু সওজের একার কাজ নয়। এর সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার, সাধারণ মানুষ সবাই জড়িত। রাস্তা সবাই ব্যবহার করে, কিন্তু সংরক্ষণের জন্য কেউ দায়িত্ব পালন করে না। তার পরও বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও মাহাবুব ব্রাদার্সের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু বিনা মূল্যে সংস্কার করে দেবে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি পুনর্নির্মাণের খরচ না দেওয়ায় প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত ২৭ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে সরকারকে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও মাহবুব ব্রাদার্সের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তারা।
সুত্রঃ আজকের পত্রিকা