দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান কয়রার মসজিদকুড় মসজিদ

0
0
অমিত কুমার ঢালী, কয়রা প্রতিনিধি :- খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে   মসজিদকুঁড় নামক স্থানে নির্মিত বিধায় মসজিদটি মসজিদকুড় মসজিদ নামে পরিচিত। এই মসজিদটি প্রাচীনকালের একটি ঐতিহাসিক  নিদর্শন। আনুমানিক ৯শ বছরের পুরাতন দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান বলা হয় এটিকে।
মসজিদকুঁড় মসজিদটিতে এলাকাবাসী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও শুক্রবারে জুম্মার নামাজ আদায় করে থাকেন। স্থানীয় জনশ্রুতি ও অবকাঠামোগত নির্মান শৈলী   অনুযায়ী হযরত খানজাহান আলী (রহঃ) এর সহচর বুড়াখাঁ ও তার পুত্র ফতেখাঁ’কে মসজিদকুঁড় মসজিদের নির্মাতা বলে ধরা হয়।
কতিথ আছে যে খানজাহান আলী (রহঃ) ঝিনাইদহের বারবাজার থেকে স্ব-দলবলে যশোরের মুড়লী পর্যন্ত পৌঁছে একদল সঙ্গী নিয়ে বাগেরহাটের দিকে যান এবং তার বিশ্বস্ত সহচর বুড়াখাঁ’র নেতৃত্বে আরেকটি দলকে মসজিদকুঁড় বেদকাশী অঞ্চলের দিকে প্রেরণ করেন। খানজাহান আলী (রহঃ) এর নির্দেশ ও দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন  স্থানে জলাশয় খনন, রাস্তা ও মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমান পাইকগাছা উপজেলায় বুড়াখাঁ’র সঙ্গী সরল খাঁ দীঘি, লস্কর দীঘি, চালধোয়া পুকুরসহ কয়েকটি জলাশয় এখনো স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে।
স্থানীয় অনেকেই জানান, পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পাইকগাছার সীমান্তবর্তী কয়রা উপজেলার শুরুতেই কপোতাক্ষ নদীর তীরে নির্মাণ করা হয় মসজিদকুঁড় মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণে কপোতাক্ষ নদ আর পশ্চিম দিকে রয়েছে খাল।  মসজিদের কোন শিলালীপি পাওয়া যায়নি। তবে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ ও মসজিদকুঁড়ের নয়গম্বুজ মসজিদের গঠন প্রণালি ও স্থাপত্য কৌশলের সাদৃশ্য থাকার কারণে এটি খানজাহান আলী (রহঃ) এর নির্মিত বা সমসাময়িক বলে ধারণা করা হয়।
 এলাকার প্রবীনদের ধারণা,তৎকালীন এলাকার জঙ্গলের কাঠ কেটে কলিকাতায় বিক্রি করা হতো। এ সময় মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়। ভারতবর্ষ ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদটি ব্যবহার হয়ে আসছে। বিরাট আকারের মিনারগুলি ছাদের কার্ণিশের উপরে ওঠেনি। এগুলিকে চারটি গোলাকার ও স্ফীত রেখা দ্বারা অলংঙ্কৃত করা রয়েছে। মসজিদের বাইরের দেয়াল দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর দিকে পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা অলংঙ্কৃত ছিল। খিলান ও কার্ণিসের উপরেও অনুরূপ অলংঙ্করের কাজ ছিল।
 অলংঙ্কৃতের মধ্যে রয়েছে পদ্মফুল, মালা, বিলম্বিত রজ্জু ও ঘন্টাসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি। মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে ৪টি প্রস্তর স্তম্ভ, ইটের তৈরি ভিত্তিবেদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেক স্তম্ভ ২টি করে পাথরের সাহায্যে নির্মিত। উচ্চতার সমতা রক্ষার জন্য নিটে ইটের তৈরি ভিত্তিবেদী কমবেশী উঁচু করে নির্মিত। ৪টি প্রস্তর স্তম্ভ ও চারিদিকের দেয়ালের উপর খিলানের সাহায্যে নির্মিত হয়েছে মসজিদের ৯টি গম্বুজ। ভিতরের খিলান ও গম্বুজ গুলির নির্মাণ কৌশল খুবই উঁচু মানের।
কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অন্যগুলির চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। মসজিদ সংলগ্ন প্রতিবেশীরা জানান, বর্তমানে ৪৫ শতক মতো জায়গার উপর মসজিদের অবস্থান রয়েছে। এক সময় এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে মানত করতে আসতো। অনেকেই রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের জন্য, আবার অনেকেই মনোবাসনা পূরণের জন্য মানত করতে আসতো।
 তবে এটি কুসংস্কার ভেবে গত ১০ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের থাকার সু-ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ সহ সরকারিভাবে মসজিদকুঁড় মসজিদটির উন্নয়নের উদ্যোগ নিলে ৯শ বছরের পুরাতন কীর্তি হিসেবে মসজিদকুঁড় মসজিদটি হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here