ফিরোজ জোয়ার্দ্দার-ঃ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী-সন্তানের কথা গোপন রেখে পরক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিয়ে করে সেই স্ত্রী’র অন্তরঙ্গ গোপন ভিডিও ভাইরাল করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে এবং ব্লাক মেল করে টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ের অভিযোগে লম্পট স্বামীকে গ্রেফতার করেছেন থানা পুলিশ। দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম প্রতারনার শিকার হয়ে লম্পট স্বামী বিল্লাল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করে থানা পুলিশের দারস্ত হয়ে এজাহার দায়ের করেন। এজাহার দায়েরের পর থেকে থানা পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালিয়ে উপজেলার বয়েরডাঙ্গা গ্রামের শওকত খার বাড়ী থেকে লম্পট স্বামী বিল্লাল হোসেন (২৭)কে গ্রেফতার করেন। লম্পট স্বামী ঔই গ্রামের কামরুল গাজীর একাধিক বিয়ে পাগল ছেলে। ঘটনাটি বয়েরডাঙ্গা গ্রামে ঘটার পর মঙ্গলবার (১৮ ই জুন সকালে ভুক্তভোগী স্ত্রী ও তার মা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তৎক্ষনিক অভিযোগের বিষয়টি ভাইস চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী স্ত্রীকে সাথে নিয়ে থানা পুলিশের দারস্ত হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেন। এজাহার দায়েরের পর বুধবার (১৯ ই জুন) বেলা দেড়টার দিকে ঔই বাড়ী থেকে লম্পট স্বামীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। ভুক্তভোগী স্ত্রীকে নিয়ে গোপনে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও ধারণ করা সেই মেমোরী পুলিশ লম্পটের কাছ থেকে উদ্ধার করে তা সত্যতা পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যানের সামনে ভুক্তভোগী স্ত্রীর কাছে মেমোরী ফিরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনাটি এলাকায় মুহুর্তের মধ্য ছড়িয়ে পড়লে তা চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়ে উৎসুক জনতা লম্পট বিল্লালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকেন। ভুক্তভোগী স্ত্রী’র অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, যশোর জেলার শার্শা উপজোলার ভবানীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আরশাদ আলীর মেয়ে কুলছুম (২৫) ছদ্মনামের মেয়ের সাথে কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের বয়েরডাঙ্গা গ্রামের কামরুল গাজীর ছেলে লম্পট বিল্লাল হোসেনের সাথে গত ১ বছর আগে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাস পর থেকে স্বামী বিল্লাল নববধু স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টারীতে চাকরি ধরিয়ে দেন আর স্বামী অন্যত্রে সেলুনের কাজ করতে থাকেন। সপ্তাহে ছুটি ছাড়া দিনে তারা আলাদা কর্ম করলেও রাতে এক সাথেই থাকতেন। তার দেড় মাস পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামী- স্ত্রী বাড়ী চলে আসেন। এর মধ্যে বেতনের কিছু টাকা স্বামীকে দিয়ে আর বাড়ী থেকে কিছু টাকা নিয়ে স্বামীকে নতুন মোবাইল ফোন কিনে দেন দ্বিতীয় স্ত্রী। ঢাকায় দেড় মাস চাকরি করার সুবাদে স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর অজান্তেই গোপনে সেই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করতেন লম্পট বিল্লাল। বাড়িতে স্বামী বিল্লাল কিছু দিন থেকে পরবর্তীতে স্ত্রীকে নিজের বাড়ীতে না রেখো কুলসুমকে মায়ের কাছে রেখে একাই ঢাকায় চলে যান। বাড়িতে থাকা অবস্থায় বিল্লালের প্রথম স্ত্রী পাশবর্তী দক্ষিণ সোনাবাড়ীয়া গ্রামের ইউনুছ আলী মেয়ে আসমা খাতুন (২১) এর সাথে বিগত ৫ বছর আগে বিয়ে হয়। প্রথম স্ত্রী আসমা খাতুন রামভাদ্রপুর গ্রামের নানার বাড়ীতে থাকতেন এবং তাদের আড়াই বছরের একটি মেয়ে আছে বলে জানতে পারেন দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম। কুলসুম স্বামী বিল্লালের কাছে প্রথম স্ত্রী- সন্তানের কথা জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলে তা পরে স্বীকার করেন যে তার আগের স্ত্রী-মেয়ে আছে। তার পর আস্তে আস্তে বেড়ে যায় দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচারণ বিল্লালের। দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুমকে বিয়ের কথা অস্বীকার করে ঢাকায় থাকা অবস্থায় গোপনে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি তখন জানান লম্পট স্বামী। স্ত্রীর উপর এমন মানসিকতা অত্যাচারে দিন দিন বেড়ে যায় স্বামী বিল্লালের। দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুমকে বিয়ে করেছেন বিল্লাল এবং তিন মাসের অন্তস্বত্ব স্ত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। যদি জানানো হয় তাহলে গোপনে ধারণ করা অন্তরঙ্গ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। স্ত্রীর অধিকার আদায়ের জন্য লম্পট স্বামীর এমন জঘন্য আচারণ স্ত্রী তাকে বুঝাতে থাকলে তাতে স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে গোপনে ধারণ করা অন্তরঙ্গ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গয়ড়া বাজার থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। স্বামীর সাথে স্ত্রীর সেই অন্তরঙ্গ ভিডিও স্থানীয় লোকজন দেখে কুলসুমকে অবগতি করেন আর সে ধারণ করা ভিডিও দেখে স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি ভুক্তভোগী স্বামী- স্ত্রীকে ডেকে সমাধান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযুক্ত স্বামী স্ত্রীর সাথে থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলে লম্পট বিল্লালকে বাঁচাতে স্ত্রী ও তার মায়ের কাছে ইউপি চেয়ারম্যান জোরপূর্বক টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ভুক্তভোগী কুলসুমকে না দাবী বনিয়তে কাবীন নামা ও আপোষ নামায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করতে থাকেন চেয়ারম্যান মনি। কুলসুম ও তার মা কৌশলে ইউপি পরিষদ ছেড়ে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী সাহাজাদার দারস্ত হয়ে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগতি করেন। ভুক্তভোগী কুলসুম থানায় হাজির হয়ে স্বামী বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নং (২৫) ১৯/৬/১৯ দায়ের করেন। মামলা রুজু হওয়ার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেনকে বয়েরডাঙ্গা গ্রামের শওকত খার বাড়ী থেকে আটক করেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।