দৈনিক সমাজের কন্ঠ

কলারোয়া হাসপাতালে বিষ খাওয়া রোগী ওয়াশ করতে ২৫০০ টাকা ঘুষ দাবী স্যাকমো ফরহাদের

ফিরোজ জোয়ার্দ্দার-ঃ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিষ খাওয়া রোগীকে ওয়াশ করার জন্য স্বজনদের কাছে ২৫০০ টাকা ঘুষ দাবী করার অভিযোগ উঠেছে জরুরী বিভাগে কর্মরত উপ সহকারী প্যারা মেডিকেল অফিসার (ডিএমএ) ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। ফরহাদ হোসেন দাবীকৃত টাকা না পাওয়া পর্যন্ত দেড় ঘন্টা রোগীর লোকজনকে অপেক্ষা করিয়ে কোন চিকিৎসা না দিয়ে জরুরী বিভাগে বিভিন্ন রোগী দেখতে ব্যাস্থ থাকায় ফুপে উঠেন জনতা। অবশেষে এক হাজার টাকার বিনিময়ে ফরহাদের হাতে দিয়ে রোগীর লোকজনের অনুরোধে বিষ খাওয়া রোগীর চিকিৎসা করা হয় হাসপাতালে নিয়ে আসার দেড় ঘন্টা পর। এ সময়ের মধ্য রোগীর লোকজন উত্তেজিত হয়ে মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুপে উঠেন। ঘটনাটি (শুক্রবার ৭ই জুন) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঘটে। বিষ খাওয়া রোগী হলো মোহাম্মদ রাজু (২০)। সে উপজেলার সোনাবাড়ীয়া গ্রামের হোসেন মেম্বারের বাড়ির পাশে মৃত মোসলেম আলীর ছেলে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের (আরএমও) শফিকুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত উপ সহকারী প্যারা মেডিকেল অফিসার (ডিএমএ) ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে আশ্বাস্ত করলে উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। বিষ খাওয়া রোগীর অভিযোগের বিবরণে চাচাতো ভাই সালাম ও মামা বাবলুর রহমান জানান, পারিবারিক কলাহের জের ধরে রাজু শুক্রবার (৭ই জুন) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বাড়িতে থাকা বিষ পান করে আত্নহত্যার করার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরী বিভাগের কর্মরত প্যারা মেডিকেল অফিসার (ডিএমএ) ফরহাদ হোসেন বিষ খাওয়া রোগীর চাচাতো ভাই সালামের কাছে রোগীকে ওয়াশ করার জন্য ২৫০০ টাকা ঘুষ দাবী করেন। ততক্ষণে ১ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার বিষ খাওয়া রোগী রাজু মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাসপাতালের ওয়াশ রুমে। দাবীকৃত টাকা না পেয়ে মেডিকেল অফিসার ফরহাদ বিষ খাওয়া রোগী রাজুকে এখানে চিকিৎসা হবে না বলে জানিয়ে দিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে মামা বাবলুর রহমানের অাকুল অনুরোধের পর চাচাতো ভাই সালামের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন মেডিকেল অফিসার ফরহাদের হাতে। দাবীকৃত টাকা (ঘুষ) সম্পূর্ণ হাতে না পেয়ে ফরহাদকে বাকী টাকা এনে দিচ্ছি বলে অনুরোধে সে অসন্তুষ্ট হয়ে রোগী রাজুকে চিকিৎসা না করিয়ে আরো আধা ঘন্টা ওয়াশ রুমে অপেক্ষা করায়। ১ হাজার টাকা নেয়ার কিছুক্ষণ পর স্বজনদের আবার অনুরোধ করলে ফরহাদ হোসেন রোগীর কাছে গিয়ে দেখতে পান রোগীর লোকজন বিষ খাওয়া রোগীকে দুই বালতী পানি দিয়ে ওয়াশ করে বিষমুক্ত করে ফেলেছেন। তার পরে রোগী কিছুটা স্বাভাবিক হলে হাসপাতালের ৪নং কেবিনে ভর্তি করার পর নার্সরা বাকি চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। বর্তমানে রোগী রাজুর অবস্থা অাশংকাজনক বলে জানান নার্সরা। ঘটনাটি জানা জানি হয়ে যাওয়ার পর উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ঘিরে ফেলে প্যারা মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেনকে মারতে ধেয়ে আসেন। কিন্তু স্বজনদের অনুরোধে ফরহাদ হাসপাতেলের জরুরী বিভাগে কর্মরত থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। এদিকে ঘটনাটি ভীন্নক্ষাতে প্রবাহিত করার পায়তারা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন ঘুষ চাওয়া বা নেয়া এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ফরহাদ মিথ্যা বলায় উত্তেজিত জনতা তার উপর আক্রমন করার চেষ্টা করেন। কেন উত্তেজিত জনতা আপনার উপর আক্রমন করার চেষ্টা করবেন ফরহাদকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যান। তাছাড়া মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য জনতাকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট কথাবার্তা ছড়াচ্ছেন যার কোন ভিত্তি নেই, সম্পূর্ণ মিথ্যা। এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আসাদুজ্জামান সাহাজাদা। তিনি জরুরী বিভাগে কর্মরত অভিযুক্ত প্যারা মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন ও রোগীর মামা বাবলুর রহমানের কাছে বিষয়টি শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। সরকারী হাসপাতালে কেন রোগীর লোকজনের কাছে ১ হাজার টাকা অর্থের লেনদেন করা হলো এমন প্রশ্ন করা হলে মেডিকেল অফিসার ঘুষ নেয়া বা চাওয়ার বিষয়টি ভাইস চেয়ারম্যান মহাদয় ও উত্তেজিত জনতার সামনে স্বীকার করে বলেন ভুল হয়ে গেছে। এমন ভুল আর কখনো হবে না মাপ করে দেন বলে জানান মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন। উপস্থিত ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আসাদুজ্জামান সাহাজাদা ও জনতার সম্মুখে ঘুষ নেয়া ১ হাজার টাকা রোগীর মামা বাবলুর কাছে ফিরিয়ে দেন মেডিকেল অফিসার ফরহাদ। এ বিষয়ে আগামী উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে হাসপাতালে সাধারণ রোগীর সাথে প্রতারণা বা অর্থ লেনদেনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে বলে জানালেন ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আসাদুজ্জামান সাহাজাদা। এর পর ঘটনাটি ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আসাদুজ্জামান সাহাজাদা তৎক্ষনিক জরুরী বিভাগে উপস্থিত হয়ে হাসপাতালেন (আরএমও) শফিকুল ইসলামসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই (আরএমও) শফিকুল ইসলাম হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত জরুরী বিভাগে কর্মরত প্যারা মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন ও রোগীর লোকজনের কাছে ঘটনাটি শুনে প্রমানিত হওয়ার মেডিকের অফিসার ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে শনিবার (৮ই জুন) বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানালে ভাইস চেয়ারম্যানসহ উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এছাড়া প্যারা মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন হাসপাতালে আসা সাধারণ সুস্থ রোগীকে ভয় ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নির্ধারিত হাসান প্যাথলজি ও মুন্না প্যাথলজিতে পাঠিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেন। সেখান থেকে প্যাথলজি মালিকরা মেডিকেল অফিসার ফরহাদের জন্য রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা কমিশনের টাকা রেখে দেন। এছাড়া এমন শত শত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে জানালেন (আরএমও)।