কুমিল্লার বড়ুরার আখ চাষীদের সুমিষ্ট হাসিঁ ফলন বেশী লাভবান অধিক

0
0

এ আর আহমেদ হোসাইন –
কুমিল্লা প্রতিনিধি :

কুমিল্লা বরুড়ার  উপজেলার মাটি আখ চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানকার আখ খেতে যেমন সুস্বাদু  দেখতেও তেমনি সুন্দর। ফলনও বেশ ভাল হয়।
ওই এলাকার আখের রয়েছে কদর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে।বরুড়ার উৎপাদিত আখ কুমিল্লার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। চৈত্র মাসের শুরু থেকে আখের চারা লাগানো হয় আর আষাঢ়ের পর থেকে পরিপক্ব হয় ওই এলাকার আখ। চার মাস বরুড়ার কৃষকরা ব্যস্ত থাকে আখ চাষবাদ নিয়ে।

বরুড়া উপজেলার কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম জানান গেল বছরের লক্ষ্যমাত্রা ডিঙ্গিয়ে এবার ১২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছরই উপজেলায় আখ চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১১০ মেট্রিক টন আখ চাষ হয়। প্রতি হেক্টর জমি আখ চাষ করতে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা।আর এই পরিমাণ জমির আখ বিক্রি করা হয় প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায়।
বরুড়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ওই উপজেলার কৃষকদের আখ চাষের প্রতি আগ্রহ দেখে তিনি ২২ জন কৃষককে সরকারি খরচে আখ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেন।

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা আখ চাষে বেশ প্রসিদ্ধ।এখানকার প্রতিটি ইউপিতে কম-বেশি আখ চাষ করা হয়।বিশেষ করে দরগাহ নামা, বিজয়পুর, বাতাইছড়ি, ঝালগাও, এগারগ্রাম, বৈরিয়া, কামেড্ডা, শালুকীয়া, দেওড়া, ঝলম, ডেউয়াতলী, মেড্ডা,আমড়াতলী, ফলকামুড়ি,লাইজলা, দিগলগাও গ্রামে অনেক আখের চাষ হয়। ওইসব এলাকার আখ চাষে ফলন বেশী হওয়া চাষীরা ব্যাপক লাভবান  হন।
বরুড়ার অধিকাংশ কৃষক এখন আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যার ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।আখের প্রতি শলা উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয় ২৫থেকে ৩০ টাকা।প্রতি শলা বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকা।বেশীর ভাগই আখ জমিতেই থাকা কালীন সময়ে বিক্রি করে দেন কৃষকরা।বেপারীরা সময় সুযোগ করে,প্রয়োজন অনুযায়ী জমি থেকে আখ সংগ্রহ করে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।

উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে আখ চাষি শাখাওয়াত হোসেন জানান, ধান চাষে এখন আর লাভ থাকে না। কখনো কখনো উৎপাদন খরচও উঠে না।কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটা জমিতে ১০ হাজার টাকা খরচ করে আখ চাষ করলে সব খরচ বাদ দিয়ে কম করেও ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।পূর্ন হয় নিজেদের এবং আত্মীয়দের আখ খাওয়ার চাহিদা।

একই গ্রামের আলী আজ্জমের ছেলে খলিলুর রহমান বলেন, আখ চাষে শ্রমিকও কম লাগে। অনেক সময় আখ কাটার জন্য শ্রমিকও দরকার হয় না।পাইকাররাই তাদের শ্রমিক নিয়ে আসে।যেহেতু তারা জমির পুরো আখ কিনে নিয়েছে তাই তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আখ কাটে নিজেদের মত করে।

এলাকার বড় আখ চাষি তালুকপাড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের ছেলে আবদুল হান্নান বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে আখ চাষ করি। সরকার যদি আমাদের আখ চাষের উপর সহজ শর্তে ঋণ দিত তাহলে আমরা আরো বেশি করে জমিতে আখ চাষ করতে পারতাম।আমাদের মধ্যে অনেক দরিদ্র কৃষক রয়েছে যারা মহাজনদের কাজ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আখ চাষ করে।পরে আখ উৎপাদনের সময় সুদসহ ঋণ পরিশোধ করে তাদের লাভ খুব একটা থাকে না।তিনি সরকারের কাছে বরুড়ার আখ চাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার দাবী করেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বরুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন,এ বছর বরুড়ায় গত বছরের তুলনায় আখের চাষ বেশি হয়েছে। আখের চাহিদা বেশি হওয়ায় বরুড়ার আশপাশের উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে এর চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় এ ফসলটির উৎপাদন বাড়াতে সরকার চাষিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করছে বলে তিনি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here