আজিজুল হক নাজমুল , কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
শীতের অাগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুড়িগ্রাম জেলার গাছিরা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের অাগমনী বার্তার শুরু থেকেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছেন তারা। বেড়ে উঠেছে অবহেলায় -অযত্নে পড়ে থাকা গ্রামবাংলার খেজুর গাছের কদর। শীতের অাগমনী তীব্রতা অাস্তে অাস্তে বেড়ে যাওয়ায় খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা হাতে দা, বাটাল ও কোমরে রশি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে ছাছা-ছেলা করেন এবং ছেলা স্থানে নল বসান। গ্রামগঞ্জের প্রতিটি বাড়ীর খেজুর গাছে।গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি বা মাটির পাত্র বেধেঁ দেন রসের জন্য। পরের দিন সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের মৌসুম জুড়ে গ্রামাঞ্চলে খেজুরের রস দিয়ে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবে নানান রকম পিঠা তৈরি করা হয়। ভাপাপিঠা, পুলিপিঠা, পাঠিসাপটা, রসপিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায় খেজুর গাছের রস অার গুড় দিয়ে। গ্রামাঞ্চলে কোন কোন বাড়ীতে নতুন মেহমানদের ডেকে এনে খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন পিঠা দিয়ে অাপ্যায়ন করে। এ রস অত্যান্ত সুস্বাধু ও মানবদেহর উপকারিতার কারনে মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই খেজুর রস। তাই শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে অাসতো গ্রামবাংলার খেজুর রস খেতে। শীতের সকালে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠে। এছাড়াও শীতের সকালে খেজুর রসের গুড় দিয়ে তৈরি ভাপাপিঠা খেতে গ্রামাঞ্চলের বাজারের দোকানগুলোতে বেশ ভিড় জমে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের গাছি গুনজোর অালীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীতের অাগমনী বার্তা মৌসুমের শুরুতেই অামি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ শুরু করি। অামি প্রায় ৩৫-৩৬ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত অাছি এবং এই কাজ করেই অামি স্বাবলম্বী। অামি খেজুরের রস বিত্রুি করিনা। এই সুস্বাদু রস অাগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের পাটালি এবং নালীগুড় এর ফলে কাজের চাপে দম নেওয়ার সময় পায় না তারা। তিনি গুড় বিত্রুি করেন পাইকারি। নাগেশ্বরী, ভৃঙ্গামারী, বালারহাট, ফুলবাড়ী, খড়িবাড়ী বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এসে তার বানানো গুড় কিনে নেয়। তিনি প্রতি কেজি গুড় ১০০ টায় বিত্রুি করেন।তিনি অারও জানান খেজুরের রস ও গুড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে । হোসেন অালী( ৪৯) গাছি জানান, একটি খেজুর গাছ থেকে ৮-১০ বছর পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। প্রতি বছরে ৩-৪ মাস খেজুর গাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যত বেশী শীত পড়বে তত মিষ্টি রস পাওয়া যাবে। খেজুর রস অার গুড় বিত্রুি করে তারা অার্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি অারও জানান, শীতের পিঠা এবং পায়েসের জন্য খেজুরের রস ও গুড়ের বাড়তি চাহিতা রয়েছে। ফুলবাড়ী অাবেদীয়া দাখিল মাদ্-রাসার সহকারী শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান জানান, শীতের সকাল ও খেজুর রস এ দুইটিই অামার খুব প্রিয়। ছোটবেলায় খেজুরের রস খাওয়া অামার অভ্যাসে পরিনত কয়েছিল। প্রায় রোজ সকালে রাস্তায় দাড়িঁয়ে থাকতাম কখন খেজুর রস বিত্রুেতা অাসে; ২টাকা দিয়ে এক গ্লাস কি যে একটা অনুভৃতি এটি যারা খেজুর রস খাননি তাদেরকে বুঝাতে পারবোনা। রসের পাশাপাশি খেজুরের গুড়ও অামার কাছে খুব প্রিয়।মিড়েরবাড়ী( ঝাড়খোলার) শ্রী চন্দন চন্দ্র রায় জানান, খেজুর গুড় দিয়ে বানানো পায়েস অামার প্রিয় খাবার এছাড়াও খেজুর পাতা দিয়ে অাকষর্নীয় মজবুত পাটি অার হাতপাখা তৈরি হয়।