দৈনিক সমাজের কন্ঠ

অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলো যশোরের ঝিকরগাছার সেই অগ্নিদগ্ধ শিশু মারিয়া

শিশু মারিয়ার অগ্নিদগ্ধ ছবি

নাজিমুদ্দিন জনি, শার্শা (যশোর) প্রতিনিধিঃ মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নিলো অগ্নিদগ্ধ শিশু মারিয়া। পরাজয় বরণ করে মা বাবা আত্মীয় স্বজন এবং তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসা দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। বুধবার সকালে ঢাকাস্থ বার্ণ ইউনিটের ২য় তলায় এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর সহ্য করতে পারছিনা, আমার চিকিৎসা হতে অনেক টাকা পয়সা লাগবে, এত টাকা আবার বাবা কনে পাবে, আমার বাবা গরীব লোক, আমি বাঁচতে চাই..! আপনারা আমাকে বাঁচান! কথা গুলো এখনো কানে বাজে..! অগ্নীদগ্ধ হওয়ার দীর্ঘ ৬ মাস পরে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে এমন আকুতি গুলো করেছিলো ঝিকরগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামের অগ্নিদগ্ধ শিশু মারিয়া.!

যশোরের ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের নায়ড়া গ্রামের ভাটার ট্রলি চালক হত দরিদ্র রুবেল হোসেনের শিশু কন্যা মারিয়া (৭) এবং স্থানীয় নায়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী ছিলো মারিয়া।

গত বছরের ডিসেম্বরে আগুন পোহাতে গিয়ে আগুনে পুড়ে পুরো শরীর ঝলসে যায় মারিয়ার। অসহায় পিতা ট্রলি চালক মেয়ের চিকিৎসার্থে আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসীর সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে সে সময় চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন। সে সময় মেয়ের চিকিৎসার জন্য যশোরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করান। কিন্তু অবস্থার তেমন পরিবর্তন না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১৫দিনে খরচ হয় প্রায় দু’লক্ষ টাকা। অসহায় পরিবারের জন্য এই ব্যায় বহুল খরচ যোগাতে না পেরে সেখান থেকে বাড়ীতে ফেরত নিয়ে আসেন মারিয়ার দরিদ্র পিতা রুবেল।

অবশেষে শার্শা,বাগআঁচড়া সাংবাদিক সমাজ ও বেনাপোল সীমান্ত প্রেসক্লাবের কাছে মারিয়ার ঘটনাটি সামনে আসলে মারিয়াকে সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে পুনরাই ঢাকার বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ফেসবুক প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় মারিয়ার খবর প্রকাশ হলেই মুহুর্ত্বের মধ্যে ভাইরাল হয় মারিয়ার খবর। চিকিৎসার জন্য হাত বাড়ায় দেশ ও বিদেশের বিত্তবান সহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। মারিয়ার চিকিৎসার জন্য উঠে আসে ৬ লক্ষ টাকারও বেশি। পুরোদমে চিকিৎসা চলতে থাকে মারিয়ার। প্রাথমিক পর্যায়ে শিশু মারিয়া কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানতেই হলো তার।

বুধবার সকাল ৭টা বাজে। হঠাৎ মারিয়ার বাবার ফোনে রিং আসে ঢাকা থেকে। ফোনটি রিসিভ করতেই ফোনের ও পাশ থেকে ভেসে আসে আধো আধো কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মারিয়া আর নেই। কথাটা বিশ্বাস যোগ্য না হলেও চরম সত্যটাকে মানিয়ে নিয়েই অঝরে কেঁদে উঠে মা বাবা। সাথে সাথে এই হৃদয় বিদারক কান্নার রোল পড়ে যায় মারিয়ার বাড়িতে। মুহুর্ত্বের মধ্যে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যায়। শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো নায়ড়া গ্রাম। মারিয়ার মৃত্যুর খবর সাংবাদিক মহল সহ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে যেতে সময় লাগলো না। মা বাবা আত্মীয় স্বজনের পাশাপাশি শোকে কাতর হয়ে পড়ে মারিয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম দেওয়া সাংবাদিক মহল।

আজ তুমি নেই..! ভাবতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে..!চলে গেলে না ফেরার দেশে..! তোর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে! কিছুই করতে পারলাম না তোর জন্য! ওপারে ভাল থাকিস! আমাদেরকে ক্ষমা করে দিস। এমন শত শত স্টাটাসে ফেসবুকের পাতায় নিজেদের কষ্টের কথা প্রকাশ করে সাংবাদিক সমাজসহ কাছের মানুষেরা।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় ঢাকা থেকে মারিয়ার গ্রামের বাড়ি ঝিকরগাছার নায়ড়া গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় মারিয়ার নিথর দেহ বহনকারী এ্যাম্বলেন্সটি।