কলি আক্তার মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দুই শতাধিক মানুষকে প্রলোভনে জড়িয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন মো. এবাদুল ওরফে সাজ্জাদ শেখ নামে এক এনজিও কর্মকর্তা। সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ভূক্তভোগীরা। ব্যানার-ফেষ্টুনের লেখামতে রেজিষ্ট্রেশবিহীন ওই এনজিওটির নাম ‘ শেখ ফজলুর রহমান সৌদিয়া বহুমুখী প্রকল্প’।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী ইন্দুরকানি উপজেলার ফজলুর রহমান শেখের ছেলে সাজ্জাদ ওই এনজিওটির পরিচালক পরিচয় দিয়ে দু’বছর পূর্বে মোরেলগঞ্জের চর হোগলাবুনিয়া গ্রামে কিছু জমি কিনে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এর পরে তিনি সেখানে বিভিন্ন লোকের জমি লিজ নিয়ে ‘শেখ ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশন সৌদিয়া বহুমুখী প্রকল্প’ নামে এনজিও কার্যক্রম শুরু করেন। প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক, ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক দুটি মাদরাসা, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, হেফজখানা, গরু-ছাগলে খামার, হাস-মুরগীর খামার, মৎস্য চাষ ও ধান চাষের প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিয়ে দুই শতাধিক নারী পুরুষের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়াও মসজিদ, গৃহ নির্মাণ, লোন দেওয়া ও বিদেশে পাঠানোর কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়দের নিকট থেকে। রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি ভাটা থেকে কয়েক লাখ টাকার ইট, বালু বাকিতে নিয়েছেন।
এলাকাবাসির কাছে আস্থাভাজন হবার লক্ষে এই ‘সাজ্জাদ শেখ’ ওই গ্রামের একটি বেহাল সড়কে উন্নয়নমূলক কাজও শুরু করেছেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে রাস্তার কাজ উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতায় অতিথির আসনে বসিয়ে সম্মানিত করেন। বিভিন্ন সময়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ব্যানারগুলোতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, স্থানীয় এমপি ও শেখ পরিবারের লোকদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
সুচতুর সাজ্জাদ এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে মুহা.বাহ্া আল-দিন(সৌদি নাগরিক) বলে প্রচার করেছেন। নিজেকে দেখিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে। প্রকল্পগুলোর আওতায় ৬টি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মান করে দিয়েছেন এসব স্থাপনা দেখে মোরেলগঞ্জ ও ইন্দুরকানি উপজেলার ৮ গ্রামের ২৫০ টি পরিবারের লোক বিদেশ যাওয়া, লোন পাওয়া ও চাকুরির আশায় গত দুই বছরে ৩০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত সাজ্জাদ ও তার প্রতিনিধিদের হাতে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি চাকুরি পাওয়া লোকজন বেতনের জন্য চাপ দিলে সে পালিয়ে যায়। ভূক্তভোগীরা সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন প্রকল্প এলাকায়। এর আগে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মোরেলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে কথিত ওই এনজিও কর্মকর্তা সাজ্জাদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি পরিস্থতির শিকার। সরোয়ার মাষ্টারসহ কয়েকজনে আমার নাম করে টাকা নিয়েছে। আমি কারো টাকা আত্মসাৎ করিনি। দোকানে আমার কাছে কিছু টাকা পাবে তা দিয়ে দেব। আমি বসে নেই। আইনের আশ্রয় নেব। পরিস্থিতির কারনে আমি একটু অন্য জায়গায় আছি।
এ সম্পর্কে থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।