ডাঃ বাহারুল আলম – নড়াইলের ঘটনায় চিকিৎসকদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ একপেশে ও পক্ষপাতমূলক।
যে কোন অশোভন, অশালীন আলাপচারিতা বা লেখালেখি অপরাধ, সমর্থন যোগ্য নয় । কিন্তু নড়াইল জেনারেল হাসপাতালের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য কৃতকর্মের জন্য অনুশোচিত হয়েছেন , দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে সংক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা সংসদ সদস্য-র প্রতি সামাজিক প্রচার মাধ্যমে অশোভন উক্তি করার জন্য অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশ করলেই বিষয়টা মিটে যেত । প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের আইনের ধারা উল্লেখ করে কারণ দর্শানোর পত্র দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না । একইভাবে সংসদ সদস্য নড়াইলের যে চিকিৎসকের সাথে মোবাইল ফোনে অশোভন আচরণ করেছে , সেখানে তিনিও একই ধরণের অপরাধ করেছেন।
মন্ত্রণালয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর প্রতি সংসদ সদস্যের এরূপ আচরণের বিষয়ে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন করলে সেটি ছিল যথার্থ ও নিরপেক্ষ ।
সংসদ সদস্যও প্রজাতন্ত্রের আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁর অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশে যদি অপরাধ প্রশমিত হয়ে থাকে তাহলে সংক্ষুব্ধ চিকিৎসকদেরও একইভাবে অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে তাদের কৃত অপরাধের অবসান ঘটানো উচিত । মন্ত্রণালয় চিকিৎসকদের সতর্ক করলেই তারা দুঃখ প্রকাশের সুযোগ পেত । কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটা না করে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে একপেশে ও পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে চিকিৎসক সমাজকে অপমান ও হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে । সেখানেও অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। (লিঙ্ক দেওয়া হল মন্তব্যের ঘরে)। জনগণ ও চিকিৎসকদের মুখোমুখি করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এরূপ পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ অনেক –
* কেরানীগঞ্জের এসিল্যান্ড এসিআর-এ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে শার্ট খুলতে বলায় টিএইচএফপিও ডা দিগন্তের উপস্থিতিতে অস্ত্র উঁচিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে হাসপাতালে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। সেই ঘটনায় মন্ত্রণালয় ১৮(৩)ধারায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোন অভিযোগ আনে নি , কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় নি ।
*লক্ষ্মীপুরে সিভিল সার্জনকে বিনা কারণে অপমান ও লাঞ্ছিত করায় ঐ জেলার এডিসি জেনারেল হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে করজোড়ে ক্ষমা চাওয়ায় হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছিল। এরপরেও মন্ত্রণালয় এডিসি জেনারেলের কোন অপরাধ খুঁজে পায় নি এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ জারি করে নি।
*বীরগঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ড তার অফিসে মামলা পরিচালনা করতে আসা এক আইনজীবীকে অপমান করে বের করে দেওয়ার প্রেক্ষিতে ঐ এসিল্যান্ডকে কেবল অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন করে কারণ দর্শাতে বলে নি মন্ত্রণালয়।
*বাহুবল উপজেলার ইউএনও সেই উপজেলার প্রকৌশলীকে হাতকড়া লাগিয়ে গ্রেপ্তার করে নিজ অফিসে নিয়ে আসে, যা সে পারে না । এক্ষেত্রেও ইউএনও-কে প্রজাতন্ত্রের ১৮ (৩)ধারায় অভিযুক্ত হতে হয় নি । অথচ অপরাধ ছিল মারাত্মক।
এরূপ অসংখ্য ঘটনা আছে যেখানে মন্ত্রণালয় কেবল চিকিৎসক পেশাজীবীদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় , জনপ্রশাসন ক্যাডারদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলেও তাদের কাছে কোন কৈফিয়ত চাওয়া হয় না। নড়াইলের ঘটনা কেবল তারই ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য।
পেশাজীবীরা কখনও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পাবে না , কেবলই অভিযুক্ত হতে থাকবে ।মাননীয় এ বৈষম্যের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করেছিলেন –আজও তার কোন সমাধা হয়নি ।