প্রিয়া সাহা কীভাবে ট্রাম্পের কাছে গিয়েছেন জানে না তার – সংগঠন

0
3

সমাজের কণ্ঠ  ডেস্ক   :২০ জুলাই, ২০১৯ –   

বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ‘ডিসঅ্যাপিয়ার্ড’ বা অদৃশ্য তথা গুম হয়ে গেছে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়ে এমন কথা বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একজন সাংগঠনকি সম্পাদক প্রিয়া সাহা।

প্রিয়া সাহার ওই বক্তব্যে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ অভিহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।

তবে প্রিয়া সাহার বিচার হলে দুর্গন্ধ আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ দাবি করেছেন যে প্রিয়া সাহা কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়েছেন তা তাঁদের সংগঠন জানে না।
জার্মানি ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে এই দাবি করেন তিনি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দপ্তর হোয়াইট হাউসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত মানুষদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ‘নাই’ (ডিসঅ্যাপিয়ার্ড) হয়ে গেছে। এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনও বিচার হয়নি।’

কাজল দেবনাথ অবশ্য প্রিয়া সাহা যে সংখ্যার কথা বলেছেন তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘প্রিয়া বলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডিসঅ্যাপিয়ার্ড। ডিসঅ্যাপিয়ার্ড শব্দটির এখন সারা বিশ্বে বাংলা অর্থ বিচার বহির্ভূত গুম। এটা হবে আসলে মিসিং পপুলেশন। প্রিয়া সাহা ভুল করে ডিসঅ্যাপিয়ার্ড শব্দটি বলে ফেলেছেন।’

কাজল দেবনাথ আরো বলেন, ‘১৯৪৭ সাল থেকে যদি আমরা হিসাব করি তাহলে এই ভূখণ্ড থেকে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ হারিয়ে গেছে। এটা কিন্তু বাস্তব অংকের কাছাকাছি। কারণ ওই সময়ে হিন্দু ছিলো মোট জনসংখ্যার ২৯ ভাগ। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে তা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ ভাগ। তাহলে ২০ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী মিসিং। আবার সে বলেছে এখন ১৮ মিলিয়ন হিন্দু আছে। এটাও বাস্তবের কাছাকাছি। আমরা বলি ১ কোটি ৫০ লাখ, সে বলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ। সে ১৯৪৭ সাল থেকে না বলায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।’

বাড়ি পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে বলেছে আমরা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এটা ফ্যাক্ট। আড়াই মাস আগে তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জমিজমা কেড়ে  নিয়েছে। সে এটা নিয়ে হইচই করেছে। অনেকের কাছে গিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনজনের নাম চেয়েছিল। আমার হিন্দু , বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান এই তিন সম্প্রদায় থেকে তিন জনের নাম দিই। তারা হলেন- নির্মল রোজারিও, নির্মল চ্যাটার্জি এবং সুজিত বড়ুয়। এখন প্রিয়া সাহা কি করে সেখানে গেলেন সেটা আমরা জানিনা। সে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক, তবে আমাদের নমিনেটেড না। আমরা তাকে পাঠাইনি।’

কাজল দেবনাথ বলেন, ‘এরপর কথা হলো ১৩৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন। ৪০ জন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন। আমাদের ফরেন মিনিস্টারও ছিলেন। তিনি আমাদের দলনেতা। তাঁদের সাথে না থেকে প্রায়া সাহা কিভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৭ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সেখানে ঢুকলেন এটা বড় প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭ জনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন। সেই ফুটেজ কিভাবে বাইরে এলো? এটা ট্রাম্পের অফিস যদি করে থাকে তাহলে তার একটা চেইন আছে। সেই চেইনে বাংলাদেশ কেন নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘তিনি যে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন এটা যৌক্তিক নয়। এটা আমরা করতে পারিনা। তবে তারা কেউই এখানো দেশে ফেরেননি। ফিরলে পুরো বিষয়টি জেনে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব।’

তবে প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাকে ‘বাড়াবাড়ি’ মনে করছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিনি হয়তো ডিসপ্লেসড বলতে গিয়ে ডিসঅ্যাপিয়ার্ড বলেছেন। এধরনের ভুল আমাদেরও হতে পারে। তাই এটা নিয়ে এখন যা হচ্ছে আমার কাছে অনেক বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের রিঅ্যাকশনগুলো হঠকারিতার শামিল হয়ে যাচ্ছে। এত বেশি রিঅ্যাকশন দেখানোর কিছু নেই।’

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজল দেবনাথ বলেন, ‘মামলাতো করতেই পারে। রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামল  করতে পারে। তবে বিচারে গেলে আমি তো মনে করি দুর্গন্ধ আরো বাড়বে।’ কিন্তু কেন দুর্ঘন্ধ বাড়বে তার কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দিতে চাননি কাজল দেবনাথ।

সুত্র: ডয়চে ভেলে

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here