দৈনিক সমাজের কন্ঠ

আর এক ‘জাহালাম‘ কান্ড ঘটিয়েছে যশোর পুলিশ। একজনের জায়গায় অন্য একজন কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক – যশোরে মিঠু শেখ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি জনির পরিবর্তে সবুজ বিশ্বাস নামে ‘নিরপরাধ’ একজনকে জেলে দিয়েছে পুলিশ। পলাতক জনির বাবার নামের সঙ্গে সবুজের বাবার নামের মিল থাকায় ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সবুজকে গ্রেফতার করে। পরে জনি বলে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠায়।

সবুজের বাবা খায়রুল ইসলাম বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক নাজির আহমেদ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ২২ মে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন কারাবন্দী সবুজ ও মামলার বাদী নিহত মিঠুর ভাই ইসরাফিল শেখকেও আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

জনি চাঁচড়া ইউপির খোলাডাঙ্গা-ধর্মতলা রেলগেট এলাকার খায়রুল ইসলামের ছেলে। আর সবুজ তার প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম বিশ্বাস।

২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর যশোর শহরতলীর পুলেরহাট বাজার থেকে মিঠু শেখকে অপহরণ করে তফসিডাঙ্গার ইসমাইল ও খোলাডাঙ্গা-ধর্মতলার জনি। পরদিন আরিচপুর বিলের মধ্যে থেকে মিঠুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইসরাফিল বাদী হয়ে ৯ জনের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটভুক্ত ৫ নম্বর আসামি হলো জনি।

মামলাটি বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন আছে। জনি পলাতক থাকায় এ আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

সবুজের আইনজীবী মোস্তফা হুমায়ুন কবীর বলেন, পুলিশ সবুজকে জনি নামে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। সবুজ যে জনি নয়, তার প্রমাণ হিসেবে আদালতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য প্রমাণপত্র জমা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আদালত ৯ মে এক আদেশে তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ ও মামলার পরবর্তী দিনে বাদীকে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।

সবুজের বাবা খাইরুল বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে সবুজ পেশায় ট্রাকচালক। ১৭ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানা পুলিশ তার নামে ওয়ারেন্ট আছে বলে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তাকে মিঠু শেখ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি জনি হিসেবে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই সোহেল রানা বলেন, গ্রেফতারের সময় সবুজ নিজের নাম জনি বলে জানায়। স্থানীয়রাও তাকে এ নামে চেনে বলেও তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। তাই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

মামলার বাদী ইসরাফিল শেখ বলেন, আমার ভাইয়ের খুনের আসামি জনি। তবে জনি না সবুজ সেটা জানি না।

যশোরে এর আগেও এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। যশোরে শিরিন বেগম নামে এক নারীকে মাদক মামলায় আদালত সাজা দেয়ার পর তার পরিবর্তে রেখা খাতুন নামে অপর এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ কারাগারে পাঠায়। ৪ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে রেখা মুক্তি পায়।