সমাজের কণ্ঠ ডেক্স :২৭ জুন, ২০১৯ –
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে সন্ত্রাসীদের দায়ের কোপে নিহত রিফাত শরীফের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার আসর নামাজের পর নিজ বাড়িতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
রিফাতের জানাজায় বিপূল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়েছিলো।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়ির চর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।
হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় রিফাতকে উদ্ধার করে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাত্ক্ষণিকভাবে তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তির এক ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সন্ত্রাসী দুই যুবক ধারালো দা দিয়ে একের এর এক কোপাতে থাকে রিফাতকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারী দুই যুবককে বারবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
তিনি একজনকে আটকানোর চেষ্টা করলে দ্বিতীয়জন হামলা চালায়, দ্বিতীয়জনকে থামানোর চেষ্টা করলেও অন্যজন রিফাতকে কোপাতে থাকে। আয়েশার চিৎকারে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হলেও আশপাশের লোকজনের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ ভয়ে এগিয়ে যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
ঘটনাস্থলটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল বলে জানা গেছে। ভিডিও চিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভিডিও চিত্রে যে দুজন সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড। আরেকজনের নাম রিফাত ফরাজী। তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক কারবারসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তারা পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে বলেও বরগুনা থানা সূত্রে জানা গেছে।
তবে কী নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড তাত্ক্ষণিকভাবে কেউ জানাতে পারেনি। একটি সূত্র বলছে, রিফাতের স্ত্রীর সঙ্গে একসময় হামলাকারী নয়ন বন্ডের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর সূত্র ধরে হামলার ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। বিয়ের পর থেকেই আয়েশাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে নয়ন। রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ গণমাধ্যমকে জানান, বিয়ের পর থেকেই তাঁর ছেলের বউকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে নয়ন নামের এক যুবক। ফেসবুকে আজেবাজে কথা লিখতে থাকে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর বুধবার রাত দেড়টার সময় নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার চার নম্বর আসামি চন্দনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।মামলার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করে পালাতে না পারেন সেজন্য দেশের সব থানায় অ্যালার্ট জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষকে এই বার্তা পুলিশপ্রধানকে (আইজিপি) জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন।আদালত বলেন, একটা মানুষকে প্রকাশ্যে কোপানো হলো, কিন্তু একটা মানুষও এগিয়ে আসলো না? সবাই দাঁড়িয়ে ভিডিও করলেন, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলেন না? প্রত্যেকটা জনগণের ব্যর্থতা।আদালত বলেন, সবাই এগিয়ে আসলে তো খুনিরা সাহস পেত না। তবে খুনিরা ক্ষমতাবান বলে কেউ এগিয়ে আসেনি বলেও মন্তব্য করেন আদালত।