দৈনিক সমাজের কন্ঠ

শার্শায় সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ 

নাজিম উদ্দীন জনি,শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি – শীতের আগমনী বার্তায় মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সৌন্দর্য মতি সরিষা ফুল।গ্রামের দিগন্ত মাঠ সেজেছে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহে। সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল।পাশাপাশি সরিষা ফুলের মন মাতানো গন্ধে সবাইকে আকৃষ্ট করছে।
সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে কৃষক।
দেশের অন্যতম একটি তৈল জাতীয় খাদ্যের নাম সরিষা। চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন এ উপজেলার কৃষকরা। মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকায় দৃষ্টিজুড়ে শুধুই হলুদের সমারোহ। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। সরিষার মাঠে এর মধ্যে দেখা মিলছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রত্যেক সরিষা চাষি অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শার্শা উপজেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৫০০ শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা গতবারের চেয়ে ২ শ হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে চাষ করা হয়েছিল এক হাজার ২ শ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০, সরিষা-১৫, সোনালি সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরি-৭ আবাদ হয়।
জানা গেছে, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের সরিষা চাষি নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছি ফলন ভালো ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বে। উপজেলার ঘিবা গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষার জমিতে ধানের আবাদও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
তিনি আরো জানান, বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করি এবং বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা প্রদান করি। বর্তমান বছরে এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ৯ শ জন কৃষককে উপকরণ সহায়তা প্রদান করেছি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষার ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে।