ডা. শাহরিয়ার আহমেদ – বাংলাদেশেই উৎপাদিত লাল চিনি ক্রয় করে নিজেকে বাচান এবং দেশ ও দেশের সকল আখ কল শ্রমিকদের বাচান, মিল রেট ৬০ টাকা দরে এই লাল আখের চিনি বিক্রি না হওয়াতে বেতন পাচ্ছে না দেশের প্রায় সকল চিনিকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।দেশে উৎপাদিত লাল চিনি বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। তাই বেতনহীন মানবেতর জীবনযাপন করছেন চিনিকল শ্রমিকরা।চিনিকল শ্রমিকদের কথা না হয় বাদ দিলাম। আমি, আপনি ধবধবে সাদা চিনি খেয়ে ডায়াবেটিস, হার্ট এ্যাটাক ও লিভার বিকল করছে, সে খবর কি রাখছেন?
লাল চিনি হলো সরাসরি আখ থেকে তৈরি অপরিশোধিত চিনি। লাল চিনিতে থাকে আখের সব উপাদান। যেমন- শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজসহ উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্লবিন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
লাল চিনির উপকারী মাত্র কয়েকটি দিক বলছি।
১) প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লাল চিনি খেলে হাড় শক্তপোক্ত হয়। সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।
২) আখের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং শরীরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়।
৩) লিভার সুস্থ রাখে।
৪) জন্ডিসের প্রকোপ কমায়।
৫) কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে।
৬) আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৭) শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে,যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
৮) শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
কিন্তু লাল চিনি রিফাইন বা পরিশোধন করতে গিয়ে ভিটামিন,মিনারেল,প্রোটিন,এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। চিনি পরিশোধন করতে ব্যবহার করা হয় সালফার এবং হাড়ের গুঁড়ো।
সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সে সম্পর্কে ডঃ উইলিয়াম কোডা মার্টিন এক গবেষণাপত্র বের করেছিলেন। ডঃ উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণাপত্রে বলেন-
“চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সাথে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়।”
ডঃ উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণা লব্ধ ফলাফল দিয়ে প্রমাণ করেন- রিফাইন করা চিনি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। হার্ট ও কিডনী ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ব্রেনের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।
আরো সহজ করে সাদা চিনির ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করা যায়।
১) যেহেতু পরিশোধনের সময় চিনির মিনারেল বা প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান দূর হয়ে যায়। তাই সহজেই বলা যায়,এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। নিউরন কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়। যা স্ট্রোক ঘটায়।
২) ভিটামিন সরিয়ে ফেলায় শরীর পুষ্টি উপাদান পায় না।
৩) সাদা চিনিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে। ফ্রুক্টোজ হজম করাতে সাহায্য করে লিভার বা কলিজা। কিন্তু অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভার হজম করাতে না পারায় লিভারে তা ফ্যাট আকারে জমা হয়। এতে করে লিভার ড্যামেজ বা লিভার নষ্ট হয়ে যায়।
৪) চিনি পরিশোধনে ব্যবহার হয় সালফার আর হাড়ের গুড়ো যা কিডনি বিকলাঙ্গ করে দেয়।
৫) সালফার ইনসুলিন নিঃসরণে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস হয়।
এত এত অপকারী বা বিধ্বংসী দিক থাকার কারণেই ডঃ উইলিয়াম কোডা মার্টিন সাদা চিনিকে বিষ বলেছেন। আমাদের দেশের মানুষ টাকা দিয়ে ধবধবে সাদা বিষ খাবে তবুও লাল চিনি কিনবে না। নিজে তো মরছে, দেশীয় চিনিকলের শ্রমিকদেরও বিনা বেতনে মারছে।