সাতক্ষীরায় খেজুরের রস গুড় আহরনের হাড়ি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা

0
1

তরিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: রস সংগ্রহ আর গুড় উৎপাদনের সময় হচ্ছে পুরো শীত মৌসুম। সেই মৌসুম চলছে এখন। খেজুরের রসে গুড় উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত গাছিরা। কিন্তু আরেকটি পেশা এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে গুরুত্ব নিয়ে যুক্ত হয়ে আছে। সেটি হলো মৃৎশিল্প। রস-গুড় সংরক্ষণের জন্য মৃৎশিল্পীরা ভাড় তৈরি করেন। সাধারণত পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা এই ভাড় তৈরির কাজ করেন। সাতক্ষীরা সহ অন্যান্য অঞ্চলের মৃৎশিল্পীরাও ভাড় তৈরি করেন। ওই এলাকার আদি পেশার এটি অগ্রগণ্য। মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এবারের চিত্রও তাই। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী ইউনিয়নের সাতানী গ্ৰামের পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা ভাড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। সদর উপজেলার , কুশখালী ,আগরদাড়ী , সহ কয়েকটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা বংশপরম্পরায় বাপ-দাদার এ আদি পেশাটি আঁকড়ে ধরে আছেন আজও। এ কাজের মাধ্যমে অনেক পরিবারেই এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলের গাছিরা রস আহরণের জন্য খেজুরগাছ ছোলার (স্থানীয় ভাষায় গাছ তোলা) কাজ শেষ করেছেন। অনেক গাছি আবার রস থেকে গুড় উৎপাদনও শুরু করেছেন। এজন্য গাছিদের প্রয়োজনীয় উপকরণ ভাড়ের জোগান দিতে মৃৎশিল্পীরা এখন মহা ব্যস্ত। দিন-রাত কাজ করছেন তারা। সদর উপজেলার সাতানী গ্রামের পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, অশোক পাল ও তার স্ত্রী সুমিত্রা একমনে হাতের কারুকার্যের নিখুঁত ছোঁয়ায় ভাড় তৈরি করে চলেছেন। ছাঁচে ভাড় তৈরির দৃশ্যটি খুবই নান্দনিক, মনোমুগ্ধকর। ভাড় বানানোর দৃশ্য অবলোকনের জন্য যে-কেউ থমকে দাঁড়াবেন। কুশখালীর সাতানী গ্রামের পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার অনেক বাড়ির নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই ভাড় তৈরিতে ব্যস্ত। কারো সঙ্গে কথা বলার বাড়তি সময় তাদের নেই। ভাড় তৈরির কাজে শুধু পুরুষ সদস্যই নন, বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তি ও করছে।। মৃৎশিল্পী অশোক কুমার পাল জানান, ভাড় তৈরির প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, যা দূরের মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই মাটি বাড়িতে এনে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কোদাল দিয়ে কয়েকবার ঝুরঝুরে করা হয়। তারপর পা দিয়ে ছেনে মোলায়েম করা হয়। মোলায়েম করা মাটি বোলে দিয়ে বালির সংমিশ্রণে চাপড় বানানো হয়। এরপর ছাঁচে দিয়ে হাতের কারুকার্যে ভাড়ের কানাসহ উপরিভাগ তৈরি করা হয়। এই ছাঁচে ভাড়ের নিচের অংশ তৈরির পর দুটি অংশকে জোড়া লাগানো হয়। তারপর দুই দিন রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানো ভাড়ে রং লাগিয়ে পাজায় (আগুনে) দেওয়া হয়। পাঁচ ঘণ্টার মতো পোড়ানোর পর ভাড় ব্যবহারের উপযুক্ত হয়। গাছিরা কেনার পর ভাড়ের গলায় দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে রস আহরণের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। সাতানীর অশোক পালের স্ত্রী সুমিত্রা জানান, প্রতিদিন তিনি ও তার স্বামী মিলে ৫০ থেকে ৬০টি ভাড় তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি ভাড় ১৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এভাবে শ খানেক ভাড় বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ করতে পারেন তারা। উল্লেখ্য, দিন দিন যে হারে খেজুরগাছ কমছে, তাতে খেজুরের রসের গুড়ভিত্তিক অর্থনীতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। খেজুরগাছ সংরক্ষণ ও নতুন করে রোপণ করার উদ্যোগ না নিলে গাছিও থাকবে না, খোঁজও মিলবে না মৃৎশিল্পীদের। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here