দৈনিক সমাজের কন্ঠ

উন্নয়নের শিখরে পৌছে দিতে ‘বাংলাদেশ‘কে আরেক ‘জাপান‘ বানাব

ফাইল ছবি

সমাজের কন্ঠ ডেস্ক – উন্নয়নের শিখরে পৌছে দিতে ‘বাংলাদেশ‘কে আরেক ‘জাপান‘ বানাব। ছোটকাল থেকেই বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানের প্রতি আলাদা টানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে এটা প্রবাহিত হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশকে জাপানের মতো উন্নত দেশে রূপান্তরের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন তিনি।

জাপানে রাষ্ট্রীয় সফরকে কেন্দ্র করে সোমবার দেশটির সবচেয়ে পুরনো ও অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম দ্য জাপান টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেন।

‘উন্নয়নের জন্য জাপান-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে শেখ হাসিনা বলেন, শৈশব থেকেই জাপান নিয়ে আমার মধ্যে আগ্রহ ও মোহ কাজ করতো। আমি জাপানি চিত্রকলা, ক্যালেন্ডার, ডাকটিকিট, পুতুল ইত্যাদি সংগ্রহ করতাম। জাপান সব সময়ই আমার হৃদয়ের কাছে।’ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সেবা ও শিল্প খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির পরিক্রমায় বাংলাদেশের রূপান্তরের কালে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনদিনের টোকিও সফরে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা ছাড়েন শেখ হাসিনা।

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটাই জাপানে তার প্রথম সফর। এবার তার সফরের আগে জাপানে নতুন সাম্রাজ্য শুরু হয়েছে। নতুন যুগকে ‘আশা ও ঐকতানের’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নতুন এই যুগ আমাদের আরও কাছে টানুক, সম্পর্ক গভীরতর করুক এবং আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সহায়তা করুক।’

জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানুষের উন্নততর জীবনমান নিশ্চিত করতে চলমান বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই বিনিয়োগের সবচেয়ে উদার ও উপযোগী পরিবেশের সুযোগ দিচ্ছে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের একটিসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।

দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও জাপান সব সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।’

সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের পতাকার মধ্যে অনেক সামঞ্জস্য আছে। জাপানি ছাত্ররা খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফর ও পরের বছর তার অনুরোধে জাপানের পক্ষ থেকে যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনার কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফরের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জাপান রূপসা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছিল। এছাড়া পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইও করে দিয়েছিল।

শেখ হাসিন আরো বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসায় ও বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে জাপানি উদ্যোক্তাদের বাড়তি আগ্রহে আমরা খুবই উৎসাহিত। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮০ জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে, যা গত দশকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আমরা অর্থনীতির সব খাতে বিদেশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের রাস্তা উন্মুক্ত রেখেছি এবং বিনিয়োগের পরিমাণে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানে জঙ্গি হামলায় নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্ব পরীক্ষিত হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০২২ সালে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের রজতজয়ন্তী উদযাপন করবে। জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। দেশটি ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।