দৈনিক সমাজের কন্ঠ

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত বাবা-ছেলে।অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ

এম সাইফুল ইসলাম শাফলু (টাঙ্গাইল) – টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত বাবা-ছেলে।অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ। টুকটাক কৃষি কাজ করে চলছে পরিবার নিয়ে অভাবের সংসার। বেশি বাইরে যাওয়া হয়না বাবা ও ছেলের। এদিক ওদিক গেলে বাচ্চারা দেখে ভয় পায়। ভূত বা দৈত্য বলে দৌড়ে পালিয়ে যায় তারা।’ বেচে থেকেও সমাজে তাদের যেনো ভোগান্তির শেষ নেই। শেষ হচ্ছেনা রোগ মুক্তিও। অজ্ঞাত বা বিরল রোগে মুখ বিকৃত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তারা খেতেও পারেন না । এক চোখ প্রায় ডেকে গেছে দেখতেও অসুবিধা। এরকই এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেন (৫৫) ও তার ছেলে মাসুদ রানা (২০)।

বৃুধবার সকালে বিরল রোগে আক্রান্ত বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিল্লালের ডান চোখের ব্রু থেকে মুখমন্ডল ও গালজুড়ে বড় আকারের টিউমারের মত পুরো অংশ ছেয়ে গেছে । বাম চোখেও এরকম হওয়ার পথে। কপাল, মুখ, গলদেশসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে অসংখ্য টিউমার জাতীয় গুটি রয়েছে। কোনোমতে চোখে দেখতে পান তিনি। বিল্লাল পেশায় একজন কৃষক। মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে তার পরিবার। তার বড় ছেলে মাসুদ রানারও জন্ম থেকেই তার মতো একই রোগ নিয়ে জন্ম হয়েছে। ছেলের বাম চোখের ওপরে টিউমার জাতীয় এ রোগটিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে। একই ভাবে ছেলেরও চোখের ব্রু থেকে মুখের গালজুড়ে ছেপে থাকায় চোখে কম দেখছেন এবং শরীরে বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট টিউমারের মত গুটি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বাবা ও ছেলে। বেশ কয়েকবার ময়মনসিংহ ও ঢাকায় ডাক্তার দেখালেও কি রোগ হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি তারা।

নিয়তি ভেবেই দিনাতিপাত চলছে বাবা-ছেলের। কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, জন্ম থেকেই তার এ রোগ। প্রথমে এটি ছোট ছোট মসুর দানার মতো লক্ষণ দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে। আগুন বা রোদের তাপ তারা কেউ সহ্য করতে পারেন না। মাথা ও মুখ ভারী ভারী লাগে। কষ্টের কারণে মাঝে মধ্যেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে এমন কষ্টের কথা জানান বিল্লাল ও তার ছেলে।

বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, আমার মতই আমার ছেলেকেও এমন কঠিন রোগে ভুগতে হচ্ছে; ওর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেলো। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সে লেখাপড়া করলে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সে আর স্কুলে গেলোনা। স্কুলে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খেলা-ধুলা করতে পারতো না ; তার মুখ দেখে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও ভূত বলে ভয় পায়। ফলে সেই থেকে তার লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেলো।

বিল্লালের স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ও পুত্রের চোখে-মুখের এ ভয়ংকর রুপ শুধু আমিই দেখছি; কিন্তু অর্থাভাবে তাদের কোন সু-চিকিৎসা করাতে পারছিনা। তিনি স্¦ামী ও ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

’ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, বিল্লালের একেতো অভাবের সংসার । তার ওপর বাবা-ছেলে যে ধরণের রোগে ভুগছেন। এটি দেখলে বুঝা যায় কষ্টের জীবন কেমন। ’বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করা পিতা বিল্লাল হোসেন ও পুত্র মাসুদ রানার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা ছাড়া ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়।