প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের মধ্যে বিয়ে হলে এ রোগের বিস্তার ঘটে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তশূন্যতা দেখা দেবে, পেটের প্লীহা বড় হয়ে যাবে, তাকে ফ্যাকাশে দেখাবে। দেশে রক্তশূন্যতাজনিত রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এ রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোন পরিবারে একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা করাতে সে পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। আর দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এমন রোগীর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। হাজার হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে না পেরে ধীরে ধীরে নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে থ্যালাসেমিয়া রোগের চূড়ান্ত চিকিৎসা ‘বোনম্যারো প্রতিস্থাপন’ চলছে। এ পর্যন্ত ৩৭ জনের বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করানো হয়েছে। বোনম্যারো প্রতিস্থাপন চালু হলেও তা দেশের রোগীর তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।
এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্তরোগবিদ্যা (হেমাটোলজি) বিভাগের প্রধান ও হাসপাতালটির বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ইউনিটের প্রধান এম এ খান জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ইউনিটের মাধ্যমে ব্লাড ক্যানসার, লিউকোমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, লিম্ফোমা, সিভিয়ার এ্যাপ্লাস্টি এ্যানিমিয়াসহ জটিল রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। সফলভাবে কর্মসূচীটি অব্যাহত রাখা গেলে রোগীরা অল্প খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা পাবেন। তাদের আর অন্য কোথাও যেতে হবে না। ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশের অনেক রোগী অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করানো ছাড়াই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঢাকা মেডিকেলে স্থাপিত বোনম্যারো প্রতিস্থাপন ইউনিটেরর মাধ্যমে বর্তমানে সীমিত সংখ্যক রোগীকে সেবা দেয়া সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক এম এ খান।
থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মো. আবদুর রহিম বলেন, দেশে রক্তশূন্যতাজনিত রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এ রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। কোন পরিবারে একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা করাতে সে পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। তাই বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের রক্ত পরীক্ষা, আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিয়ে না করা এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এর প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দেশেব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেন, এটি একটি জটিল রোগ এবং এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে রোগীকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তাই এই বিষয়ে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগীর জাতীয় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন কেন্দ্র। বিবাহপূর্ব স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দম্পতি নির্ণয় করে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
তিনি বলেন, যেহেতু এই রোগের স্থায়ী প্রতিষেধক নেই তাই একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকারের গৃহীত কর্মসূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা থ্যালাসেমিয়া রোগের নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করতে পারব বলে আশা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরেরর বক্তব্য
স্বাস্থ্য অধিদফতরেরর মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জরিপ করে জানা গেছে থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। দেশে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ অজ্ঞাতসারে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। প্রতিবছর ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়। এই রোগে আক্রান্তের লোহিত কনিকার আয়ুষ্কাল কমে যাওয়ায় ঘন ঘন রক্ত পরিসঞ্চালনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটি একটি বংশগত রোগ। পরিবারের কারও এই রোগের ইতিহাস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগের প্রতিরোধের জন্য রক্ত পরীক্ষা ও সচেতনতা জরুরি।
মেডিভয়েস –