সমাজের কন্ঠ ডেস্ক: বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, সহায়তা ও হুমকির অভিযোগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক স্টাডিজ পড়ুয়া এক ছাত্রী এই মামলা করেছেন। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী। মামলার বর্ণনায় ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের সঙ্গে প্রেম ও প্রণয়ের কথা জানিয়ে বিয়ে নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ তুলেছেন।
যদিও মাস দুয়েক আগে একই বিভাগের (ইসলামিক স্টাডিজ) আরেক ছাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সােহাগের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’র কথা জানিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন ওই ছাত্রী। সে সময় তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতাদের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা পাননি বলে দাবি তার।
ঢাবি সাংবাদিক সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্যের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে দেয়া এক অভিযোগ পত্রে ওই ছাত্রী লিখেন, ‘‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক ছিলাম। সেই সমর্থনের জায়গা থেকে সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীর সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ও যােগাযােগ তৈরি হয়। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান সােহাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-২০১৩ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সম্পর্কের এক পর্যায়ে মনমালিন্য তৈরি হয়।’’
‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা কর্তৃক সাইবার হ্যারেজমেন্টের বিচার চাই’ শিরোনামে ওই ছাত্রী আরো লিখেন, ‘‘মনোমালিন্যর তৈরির প্রেক্ষিতে নাজমুল হাসান সােহাগ আমার প্রতি ক্ষোভবশত বিভিন্ন ফেক আইডি (তন্মধ্যে Arohi Sima একটি) ব্যবহার করে আমার মোবাইল নম্বর বিভিন্ন আজেবাজে গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়। ফলত আমার নম্বরে ও হােয়াটস অ্যাপে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মেসেজ ও ফোনকল আসতে থাকে। যা আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তােলে এবং আমার সকল নম্বর বন্ধ করতে বাধ্য হই।
পরবর্তীতে পরিচিত এক ডিবি কর্মকর্তার মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে, ফেক আইডিটির মালিক নাজমুল হাসান সােহাগ। নাজমুলের সাথে ডিবি কর্মকর্তা পরবর্তীতে যােগাযােগ করলে সে দায় স্বীকার করে এবং আমাকেও পার্সনালি মেসেজ করে। পরবর্তীতে আমি সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এবং ডাকসু (সাবেক) ভিপি নুরুল হকের কাছে এ সাইবার হ্যারেজমেন্টের অভিযােগ করি এবং বিচার দাবি করি। নাজমুল হাসান সােহাগের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে অনুরােধ জানাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে তাদের সাথে যােগাযােগ করে; কিন্তু তাদের বক্তব্য হলাে- নাজমুল সাংগঠনিকভাবে যুক্ত না এবং সংগঠনে বর্তমানে নিষ্ক্রিয় তাই তারা কোনাে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। যদিও আমি জানি নাজমুল হাসান সােহাগ দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসাবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন সময় কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু অভিযােগ করাতে তারা কোনাে ব্যবস্থা নিতে অপারাগতা জানায় এবং দায় এড়িয়ে যায়। ইতােমধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মী আমার সাথে যােগাযােগ করে নানাভাবে বুঝানাের চেষ্টা করে যাতে আমি এ বিষয়ে চুপ থাকি। এছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা আমাকে বারংবার হুমকি দিতে থাকে এবং সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন তাঁর নিজস্ব আইডি হ্যাকের অভিযােগ আমার উপর চাপায়; যা একদম উদ্দেশ্যপ্রণােদিত এবং চরমভাবে অমূলক।’’
ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের জানামতে, নাজমুল হাসান সোহাগের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু হঠাৎ করে কীভাবে হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনলেন, সেটাই বুঝতে পারছি না।’ যদিও আরেক ছাত্রের দাবি, সোহাগের সঙ্গে ব্রেক-আপ হওয়ার আগে মামুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সোহাগের বিরুদ্ধে যেহেতু সাইবার হ্যারেজমেন্ট ছাড়া অন্য অভিযোগ নেই, তাই মামুনসহ সবাইকে জড়িয়ে ওই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ওই ছাত্রীকে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ বলে ফোন রেখে দেন।
মামলায় যা বলেছেন ওই ছাত্রী: মামলার অভিযোগে সম্পূর্ণ দায় মামুনের ওপর দিয়ে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, ‘হাসান আল মামুন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। নিজ বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যয়ে তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ে ম্যাসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাসান আল মামুন আমাকে তার রাজধানীর নবাবগঞ্জ, মসজিদ রোড, ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলে। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে সে।
ঘটনার পর ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ তা হতে দেয়নি। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহান শুরু করে।
অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ‘উপায়ন্তু না দেখে ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই। সে বলে মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে প্রতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেওয়া হয়। নুর আরও জানায়, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা ম্যাসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।’
অভিযোগে ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে অ্যাখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করায়; মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে