স্টাফ রিপোর্টার –
‘বাড়ির থেকে ১০ টাকা এনে দিচ্ছি, হুজুর আর মারেন না’ এমন আকুতির পরও ১০ বছর বয়সের মাদরাসাছাত্র রমজান মোল্যা রক্ষা পায়নি শিক্ষক ইমামুল হকের পিটুনির হাত থেকে।
নির্মম এ নির্যাতনের ঘটনা মঙ্গলবার বিকালে যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের খানজাহান আলী নূরানী হাফেজি মাদ্রাসায় ঘটে। আহত রমজান মোল্যা বাশুয়াড়ী গ্রামের ভ্যানচালক মো. আজানুর মোল্যার ছেলে। অসুস্থ রমজানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষক ইমামুল হক পলাতক রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, বর্তমানে মাদ্রাসায় মোট শিক্ষার্থী ২৮ জন। লেখাপড়া না করিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে গ্রামে চাল ও টাকা কালেকশন করানো হয়। মঙ্গলবার দিনভর কালেকশনের পর ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত রমজান মোল্যা কালেকশনের থেকে মাত্র ১০ টাকা খরচ করে। বিষয়টি শিক্ষক ইমামুল হক জানতে পেরে শিশুটিকে বেধড়ক পিটিয়ে মাদ্রাসার এক কক্ষে আটকে রাখেন। এটা অমানবিক। বিচার হওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু রমজান মোল্যা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমিসহ মাদ্রাসার তিনজন ছাত্রকে ইমামুল হুজুর পাশের গ্রামে চাল ও টাকা কালেকশন করতে পাঠান। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কালেকশন করে ক্ষুধা লাগলে ১০ টাকার খাবার কিনে খাই। এজন্যে হুজুর আমাকে দাঁতন গাছ দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। হুজুরের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলাম, ‘বাড়ির থেকে ১০ টাকা এনে দিচ্ছি, হুজুর আমারে আর মারেন না’ তারপরও হুজুর মারতে থাকেন এবং বলেন তোর শরীরের যেখানে মারছি তা কাউকে দেখাতে তুই লজ্জা পাবি।
আহত রমজানের পিতা ভ্যানচালক আজানুর মোল্যা বলেন, প্রতিমাসে ছেলের বেতন বাবদ ১২০ টাকা ইমামুল হুজুরের হাতে দিতে হয়। হুজুর বাড়ির সব কাজ মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে করান। আমার ছেলে হুজুরের কালেকশনের টাকা দিয়ে খাবার খাইছে। নিষ্ঠুরভাবে না মেরে আমাকে বললে আমি টাকা দিয়ে দিতাম। আমি নির্যাতনকারী হুজুরের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন, মাদ্রাসাছাত্র রমজান মোল্যার কোমর ও নিতম্ব থেকে দুই পায়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ওই স্থানে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।