সমাজের কণ্ঠ ডেক্স – আর সবুজ শ্যামলে ভরপুর ছিল গ্রাম- বাংলার পথঘাট প্রান্তর ও লোকালয় কিন্তু সেই সৌন্দর্য আজ হুমকির মুখে। আগে গ্রাম- বাংলায় অনেক দেশী গাছগাছালী পাওয়া যেত কিন্তু এখন অনেক গাছগাছালী বিলুপ্তির পথে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বেতগাছ। এখন আর আগের মতো বেত গাছ গ্রামে-গঞ্জে দেখা যাচ্ছে না।বেতগাছ সাধারণ গ্রামে-গঞ্জে রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা অার্দ্র জায়গায় জম্মে।অল্পদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হয়। চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। বেতগাছে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন পিঁপড়া, মাছি, মৌমাছি এই রস খেতে বেতগাছে ভিড় জমায়। বেতগাছের ফলকে বেতফল, বেত্তুন, বেথুল, বেথুন, বেতগুলো বেতগুটি, বেত্তুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। বেত গাছ পাওয়া যায় বাংলাদেশসহ ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ। বেত উদ্ভিদ ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ভেজা ও জংলা নিচু ভূমিতে ভালো জম্মে।বেতগাছ চিকন ও লম্বাটে হয়ে থাকে। বেতগাছ কাঁটাযুক্ত ও শক্ত হয়ে থাকে। বেতগাছ বনজঙ্গলে কাঁটা ও ঝোঁপ আকারে জন্মে থাকে। বেতগাছ এক গাছের সাথে অন্য গাছ প্রায় সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। একটি গাছ ধরে টান দিলে প্রায় সব বেত গাছ নড়ে। গ্রাম্য এ ধাঁধাঁটি বেত গাছ কেন্দ্রিক।বেত গাছ এত বেশি ছড়িয়ে পড়তো যে একটি গাছে টান দিলে অনেক দূরের গাছও নড়ে ওঠত। চৈএ মাসে আঙ্গুরের মতো থোকা থোকা নয়নাবিভুত করা বেতফল এখন য়ার চোখে পড়েনা। বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত প্রায় ফল। দুই থেকে তিন দশক আগেও আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জের বনেজঙ্গলে ও নিচু ডোবার ধারে নানা ধরনের বেত দেখা যেত।
এখন আর দেখা যায়না । বেতফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার আশ ঢাকাছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি ফল। বীজ অত্যন্ত শক্ত হয়ে থাকে। কাচা ফল সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। আবার পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে অথবা সাদা রং এর হয়ে থাকে। বেতফল থোকায় থোকায় ফলে এর প্রতিটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে। আর ফল পাকে মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে। বেতফল অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে বেতফল খুবই প্রিয়। এটি বর্তমানে আবাসন সংকটের কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে। আগের মত বেতুন বা বেতফল আর চোখে পড়ে না। বাংলাদেশে প্রায় এক বিপন্ন উদ্ভিদ ও ফল। বেতগাছ এখন দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট, চট্রগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু বেতগাছ দেখা যায় ।
শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। বেত দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পগুলো হচ্ছে, চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোলা, টোপা, চাঁচ, ধামা, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা এবং ফুলদানি তৈরীসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর রয়েছে।বেত থেকে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপএ ও গৃহসজ্জার সৌখিন সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। এগুলো দৃষ্টিনন্দন, টেকসই, মুল্যবান, নান্দনিক এবং প্রাকৃতিক । বেত একটি মূল্যবান টেকসই এবং সকল শ্রেণীর দ্রব্য হিসাবে এবং জীব বৈচিত্র রক্ষার্থে অধিক পরিমাণে বেতগাছ রোপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে অধিক যন্তবান হওয়া আবশ্যক। বাংলার মাটির গুণে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পলি, বৃষ্টিপাত আমাদের বাংলাদেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি।
দেশে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি প্রজাতির বন্য গাছপালা কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক বন্য গাছ-গাছড়াই এখন বিলুপ্তির পথে আবার ভিনদেশের গাছের আগ্রাসনেও হারিয়ে যেতে বসেছে বুনো এ প্রজাতি। আমাদের নিজস্ব গাছ-পালা নিয়ে তেমন গবেষণা হচ্ছে না আবার বিদেশের ফলের গাছ কাঠের গাছ এবং ফুলের গাছ রোপণ এবং চাষের জন্য গ্রামবাংলার শহর ও মেঠোপথ এবং প্রাকৃতিক বন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে বিদেশি ফল সবজির চাষাবাদে মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। এতে করে দেশি গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের কবিরাজ ও আদিবাসী এবং গ্রামবাংলার লোকজন এখনো নানা ঔষধ এবং ফলের জন্য দেশীয় গাছ-পালার ওপরই নির্ভরশীল। আমাদের দেশের সকল কবিই দেশের প্রকৃতি ও গাছ-পালার জয়গান করছেন।
বেতফল আমাদের দোটবেলার এক অতি কাঙিক্ষত ফল। আমরা ছোট বেলায় একে বলতাম, বেতইন ফল, ফল পরিপক্ক হলেই বেত ঝাড়ে হানা দিতাম সাবধানে কাঁটার ভয়ে তার পড়েও কাটা পায়ে ও জামাকাপড়ে বেতের কাঁটা যেত বিধেঁ।ফলের বাইরের খোলস ফেলে যখন রসাল অংশটা হাতে আসতো, তখন সে আনন্দ গ্রামবাংলার কিশোর ও কিশোরিরা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতো। বেতুনফল এনে লবণ ও মরিচ দিয়ে ভর্তা করিয়ে মজা করে খেতাম। গ্রামবাংলায় বেতের কচি পাতা তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে- মেয়েদের অনেকেই জানে না বেতফল কি? বর্তমান প্রজম্মেরর ছেলে-মেয়েদের বেতফল খুঁজতে হযতোবা গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হবে।