মেজভাই আব্দুল্লাহ আল ফরহাদের উৎসাহে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন সাইফুল্লাহ। ক্রিকেটে তার প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে পাড়া-মহল্লায়। এরপর তার ভাই থাকে পরামর্শ দেন স্টেডিয়ামে গিয়ে প্র্যাকটিস করার। ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিত ক্রিকেট খেলায় অংশ নেন সাইফুল্লাহ।
তিনি খেলেছেন জেলা পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। স্বপ্ন ছিল সাকিব আল হাসানের মতো অলরাউন্ডার হওয়ার। বাহাতি পেস বোলার ও ব্যাটসম্যান। মর্ডান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে প্রথম ক্লাব পর্যায়ে খেলা শুরু করেন সাইফুল্লাহ। সেই থেকে আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে। কোচ থেকে শুরু করে সব খেলোয়াড়ের প্রিয় হয়ে যান তিনি।
কিন্তু ২০১৫ সালে মর্ডান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে একটি ম্যাচে বল করার সময় পায়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি। সেসময় সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্প্রে ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এক চিকিৎসককে দেখালে তিনি বিষয়টি বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, সাধারণ ব্যথা, কয়েকদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। তখন ওষুধ খেয়ে ওই ব্যথা কমেও গিয়েছিল তার। কিন্ত ৩ মাস পর আবারও বল করার সময় পায়ে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। তখন থাকে কয়েকদিন রেস্টে থাকার কথা জানান ডাক্তার। কিন্তু ক্রিকেটপাগল ছেলেটা বেশিদিন রেস্ট না নিয়ে আবার চলে যান মাঠে।
২০১৮ সালের প্রথম দিকে ক্লাবের হয়ে একটি ম্যাচ খেলার সময় আবারও পায়ে ব্যথা অনুভব করেন সাইফুল্লাহ। আর সেই ব্যথাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। ওইদিন ম্যাচ রেখেই মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল তাকে।
পরে ঢাকার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন সাইফুল্লাহ ও তার পরিবার। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানা যায়, তার পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে গেছে। ডাক্তার তার চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সময়ই তাকে নিয়ে ভারতের অ্যাপোলো হসপিটালে চলে যান সাইফুল্লাহর বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল ফারুক। ভাইকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আব্দুল্লাহ আল ফারুকের চাকরি ছাড়তে হয়। কিন্তু ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা বলেছিলেন, অপারেশন লাগবে না। পর্যবেক্ষণ ও ওষুধ নিলে ভালো হয়ে যাবে। ভারতে ৪৫ দিন থেকে চিকিৎসাবাবদ খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বড় ভাইয়ের চাকরি চলে যাওয়া ও বাবা অবসরে চলে যাওয়ায় ছেলের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাইফুল্লাহর পরিবার। গেল ১ বছর ধরে ঘরের চার দেয়ালে বন্দী হয়ে রয়েছেন তিনি। আগের মতো খেলতে পারছেন না, মিশতে পারছেন না বন্ধুদের সঙ্গেও।
তার বাম পা দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি অপারেশন না করালে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করতে হবে তাকে। অপারেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ লাখ টাকার। কিন্তু অসচ্ছলতায় সেটি পেরে উঠতে পারছে না তার পরিবার।
সাইফুল্লাহর বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাই ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার। খেলার প্রতি তার উৎসাহ ও ভালোবাসা দেখে আমরা বাধা দেয়নি। কিন্তু আমার ভাইয়ের জীবনে এমন অন্ধকার নেমে আসবে তা জানা ছিল না। পরিবারের খুব আদরের সে। কিন্তু আজকে তার চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ আমাদের নেই। তাকে প্রথমে ভারতে নিয়ে গিয়ে আমাদের আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়, যা ছিল আমাদের শেষ সম্বল। তাকে ভারতে নিয়ে যেতে আমি চাকরি হারিয়েছি। চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবারের উপর নেমে এসেছে অন্ধকার। আমি চাই যদি মানুষরা আমার ভাইয়ের অপারেশন করানোর জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করেন তাহলে আমার ভাই আবার মাঠে গিয়ে খেলতে পারবে।
সাইফুল্লাহর বন্ধু সাদিক বলেন, ‘সে খুব ভালো পেস বোলার ছিল। সে আর আমি এক সঙ্গেই ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু গেল বছর ধরে সে মাঠে আসে না। তার জন্য খারাপ লাগে। একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় ঘরে বসে রয়েছে, সেটি মেনে নেয়া যায় না। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে সে আগের মতো মাঠে দৌড়াতে পারবে।’
অসুস্থ আব্দুল্লাহ খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, প্রথমদিকে ব্যথা কম ছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ব্যথা বাড়ছে। পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলছি। স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের জাতীয় দলের হয়ে খেলার। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্বপ্নটা স্ট্রেচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জানি আমার অপরাশনে প্রচুর টাকার প্রয়োজন, তাতে আমার পরিবারের সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমি চাই মাঠে গিয়ে আবার বোলিং করতে। একজন অলরাউন্ডার হওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সব কিছুই আমি করতে চাই।
সাইফুল্লাহর বাবা সুজাউদ্দিন আহমেদ খাঁ বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন অনেক বড় খেলোয়াড় হওয়ার। ম্যাচজয়ী হয়ে সে যখন ঘরে ট্রফি নিয়ে আসতো, তার খুশি দেখে আমরাও অনেক খুশি হয়ে যেতাম। কিন্তু গেল এক বছর আমার ছেলের মুখে হাসি দেখি না। আমি সবার কাছে সাহায্য চাইবো, আমার ছেলে যেন আবার মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করতে পারে।
উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ খালেদ সাইফুল্লাহকে সাহায্য করার জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট নম্বর :১৯৩২১০৯০০০১৬৭৯, আব্দুল্লাহ আল ফারুক খাঁ, প্রাইম ব্যাংক, সুনামগঞ্জ শাখা, সুনামগঞ্জ।
তাছাড়া বিকাশে কেউ সাহায্য পাঠাতে চাইলে- আব্দুল্লাহ আল ফারুকের মোবাইল ফোন : ০১৭১৪-৫০৬৩০৬ ( বিকাশ নম্বর), ০১৭৫১-১২৫১২৫ ( বিকাশ নম্বর)