রাশিদুজ্জামান সরদার, ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের ছোটবন্দ গ্রামের এক তরুণ কৃষক মৃত্যঞ্জয় মন্ডল কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথম বারের মত তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
তিনি ২০১০ সাল থেকে সিজন/অফসিজন তরমুজ চাষ করে আসছেন। পরপর ১২ বছর তরমুজ চাষ করে এলাকায় সফল তরমুজ চাষী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বরাবরই তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল, তবে কিছু কিছু তরমুজ আকার আকৃতিতে কিছুটা ছোট হয়ে যেটা বাজারে বিক্রয়ের অযোগ্য হয়ে থাকে।যেটা এলাকায় ক্যাট নামে পরিচিত। এগুলো কোন ক্রমে বিক্রি হয়না। অনেক সময় মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়। কোন কোন সময় বৃষ্টিতে পঁচে এগুলোর দূর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল ঐ সমস্ত ছোট তরমুজ বা ক্যাট নিয়ে ৩ বছর যাবৎ গবেষণা করতে থাকে।অবশেষে ২০২১ সালেল ২২ই সেপ্টেম্বর কোন রকম উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া একেবারে দেশিয় প্রযুক্তিতে ক্যাট তরমুজ কেটে ভিতরের লাল অংশ বের করে, নেটের মাধ্যমে নির্যাশ/রস বের করে উনুনে জালিয়ে গুড় তৈরি করেন। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এ গুড় অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।সরজমিনে পরিদর্শন কালে মৃত্যঞ্জয় মন্ডল বলেন তরমুজের রসে মিষ্টতা থাকার কারনে আমার মনে হয়েছিল এর থেকে গুড় তৈরি করা সম্ভব এবং আমি সেটা চেষ্টা করে সফলতা পেয়েছি। আমি এপর্যন্ত প্রায় ৮থেকে১০ কেজি গুড় তৈরি করেছি।
আমি নিজে, গ্রামের প্রতিবেশী, উপজেলা কৃষি অফিসারসহ অনেককেই খাওয়াছি। উনারা সকলেই প্রশ্বংসা করেছেন। এমনকি গ্রামের কিছু লোক তিনশত টাকা কেজি দরে কিনতে চেয়েছেন। আগামীতে আমি তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করব।
মৃত্যঞ্জয় মন্ডল আরও বলেন গুড় উৎপাদনের খবর শুনে আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিন শত শত লোক দেখতে আসছে কিভাবে তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করা হয়। এবং এলাকার অনেক কৃষক আগামি তরমুজের সিজনে তরমুজ চাষ করে গুড় উৎপাদন করে বাজারজাত করার কথা ভাবছেন।কথা বলছিলাম সাহস ইউনিয়নের ছোটবন্দ গ্রামের একজন কৃষক শিবপদ মন্ডলের সঙ্গে তিনি বলছিলেন আমি প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যঞ্জয় মন্ডলের তরমুজ থেকে গুড় তৈরির দৃশ্য দেখতে আসি।এবং আমি আগামি সিজনে তরমুজ থেকে গুড় তৈরি করার চিন্তাভাবনা করছি।
সাবেক ইউপি সদস্য রণজিৎ মন্ডল বলছিলেন ডুমুরিয়া কৃষিবান্ধব হওয়ায়। সাহস ইউনিয়নের প্রতান্ত এলাকার মৃত্যঞ্জয় মন্ডল পৈর্তিক সুত্রে কৃষি পেশায় জড়িত। সে বিভিন্ন সময়ে নুতন কিছু করার প্রত্যায়ে সর্বসময় এগিয়ে থাকে।
তারই ধারাবাহিকতায় তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।আমি তার কাছ থেকে কয়েককেজি তরমুজ গুড় কিনতে আগ্রহী প্রকাশ করায়।মৃত্যঞ্জয় মন্ডল আমাকে আশ্বাস দিয়েছে আগামিতে আমাকে তরমুজ গুড় তৈরি করে দিতে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, এটি কৃষিতে এক দারুণ অর্জন। আমাদের দেশের গুড় শিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে তাল, খেজুর গাছের সংখ্যা অপরদিকে গাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে, অদুর ভবিষ্যতে গুড় শিল্প হুমকির দিকে চলে যাচ্ছে। আমাদের উপকূলীয় লবনাক্ত এলাকা তরমুজ চাষের অত্যন্ত উপযোগী। আমাদের সিজনে কৃষক অনেক সময় ন্যয্যমূল্য পায়না এবং তরমুজের ক্যাটগুলো বিক্রি হয়না। আমার বানিজ্যিক ভাবে ঐ তরমুজ নিয়ে গুড় তৈরি করলে কৃষক একদিকে যেমন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যয্য মূল্য পাবে, অপরদিকে ফসল অপচয় রোধ হবে। আমরা মৃত্যুঞ্জয়ের মত কৃষকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রদর্শণী এবং মাঠে পরামর্শসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে।