এসএসসি ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় ভালো ফল প্রাপ্তির কলাকৌশল

0
0
বিলাল হোসেন মাহিনীঃ প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই-বোন, কেমন আছো তোমরা? আশা করি সুস্থ আছো। রোজার ঈদের পরই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এসএসসি’র পরপরই শুরু হবে এইচএসসি সমমানের পরীক্ষা। তাই এখন থেকেই শিক্ষার্থী বন্ধুদের পরিকল্পনামাফিক পড়ালেখা করতে হবে। জেনে রেখো, সঠিক কর্মপন্থা ছাড়া জীবনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তা না হলে মাঝি বিহীন নৌকার ন্যায় কূল-কিনারাহীন অজানা গন্তব্যে পাড়ি দেয়া ছাড়া কোন কিছুই হবে না! পৃথিবীর সকল মহামনীষীই তাদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করে তদনুযায়ী সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রাপ্তির মাঞ্জিলে পৌঁছে গেছেন। সুতরাং আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো আগে লক্ষ্য স্থির করা, এরপর তদনুযায়ী কর্মপন্থা নির্ধারন করা। সৃজনশীলের এই যুগে প্রশ্নটা সূক্ষভাবে বুঝে উত্তর প্রদান করা অন্যতম শর্ত। মনে রাখতে হবে প্রশ্নের ধরণ ও মান না জেনে উত্তর করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভালো ফলাফলের পূর্বশর্তঃ
# সৃষ্টিকর্তার ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখা :
একজন শিক্ষার্থীকে সর্বপ্রথম তার নিজের উপর এই আস্থা রাখতে হবে যে, সে আল্লাহর ওপর বা নিজ নিজ স্রস্টার উপর পূর্ণ আস্থাশীল।
# লেখা শুরুর পূর্বে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া : @ ‘রব্বি যিদ্নি ইলমা।’ @ ‘রব্বি ইয়াচ্ছির ওলা তুয়া’চ্ছির ওয়া তাম্মিম বিল খাইরি।’ @ ‘রব্বি ’শরহলী ছদরি ওয়া ইয়াচ্ছিরলী আমরি, ওহলুল উকদাতাম্ মিল্ লিছানি, ইয়াফকহু কওলী।’  @ এছাড়াও ‘আসতাগফিরুল্লাহ ও নবী সা. এর ওপর দুরুদ পাঠ আবশ্যক। @ হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর ও মা স্বরসতীর নাম স্মরণ করে লেখা শুরু করার বিধান রয়েছে।
পিতা-মাতা, শিক্ষক ও গুরুজনের দোয়া : পিতা-মাতার দোয়া ও আশির্বাদ ছাড়া জীবনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই সকল ক্ষেত্রে পিতা-মাতা, শিক্ষক ও গুরুজনের আশির্বাদ নেয়া অপরিহার্য। তাদের সাথে ন¤্র ও মার্জিত আচার-ব্যবহার করা কর্তব্য।পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা :উত্তরপত্র/খাতার সাজসজ্জা : * খাতায় মার্জিন আঁকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই অতিরিক্ত উত্তরপত্রসহ সকল পৃষ্ঠায় (কভার পেজ ব্যতীত) মার্জিন আঁকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মার্জিন বরাবর লেখা শুরু করতে হবে, খাতার ডান প্রান্ত পর্যন্ত লিখতে হবে। তবে ডানে কোন একটি শব্দের অংশ বিশেষ লেখা যাবে না। * প্রতিটি উত্তরের শেষে সমাপ্তিসূচক চিহ্ন দিতে হবে। যেমন- ( দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন,। ? ! ইত্যাদি)। * কোনো প্রশ্নের উত্তর পাতার দুই-তৃতীয়াংশ লেখা হলে নতুন উত্তরের ক্ষেত্রে নতুন পৃষ্ঠায় লিখতে হবে।
* একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হলে, পরবর্তী উত্তর এক (০১) ইঞ্চি পরিমান ফাঁকা রেখে নিচ থেকে শুরু করতে হবে। * প্রশ্নের নম্বর, পয়েন্ট, উদ্ধৃতির নিচে ভিন্ন কালির (নীল কালি) কলম দিয়ে আন্ডার লাইন করে হাইলাইট করতে হবে অথবা এসব ভিন্ন কালি দিয়ে লিখলে সুন্দর হয়। হাইলাইটার দিয়ে হাইলাইট করা যেতে পারে। * এক পৃষ্ঠা লেখা শেষ হলে পৃষ্ঠার নিচে “চলমান পৃষ্ঠা” লিখতে হবে। * খাতার কোথাও বা মার্জিনে লাল বা সবুজ কালি ব্যবহার করা যাবে না। * পাতার একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৃষ্ঠা নম্বর লিখতে হবে। * খসড়া (রাফ) কাজের জন্য উত্তরপত্র/খাতা ছাড়া বাইরের কোন কাগজ বা প্রশ্নপত্র ব্যবহার করা যাবে না, খসড়ার কাজ উত্তর পত্রের কোন নির্দিষ্ট স্থানে করতে হবে, খসড়া/রাফ শেষ হলে তা লম্বভাবে দাগ টেনে (একটানে) কেটে দিতে হবে, পৃষ্ঠার উপর খসড়া কথাটি অবশ্যই লিখতে হবে।উত্তরপত্র/খাতায় মার্জিন দেয়ার নিয়মাবলী  :
* কভার পৃষ্ঠা পূরণ করা হলে প্রশ্ন পাওয়ার আগ পর্যন্ত খাতায় মার্জিন আঁকতে হবে। * মার্জিন দেয়ার সময় পেন্সিল ব্যবহার করতে হবে। * খাতার উপর ও বামপাশে কমপক্ষে এক (০১) ইঞ্চি পরিমান জায়গা রেখে মার্জিন দিতে হবে। * মার্জিনে (একক) ংরহমষব লাইন ব্যবহার করাই ভাল। * মার্জিনের বাইরে কোনো নম্বর বা কিছু লেখা যাবে না।

সময় ব্যবস্থাপনা :
* সঠিক সময় নির্দেশক একটি ঘড়ি নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হবে। * ঘড়ি দেখে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর শুরু ও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে। * সময়ের প্রতি অধিক যতœবান হতে হবে,  কখনোই সময় অপচয় করা যাবে না। * প্রশ্নের ধরন ও মান বুঝে উত্তরের জন্য সময় বরাদ্দ করতে হবে এবং বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করতে হবে।
* পরীক্ষা শুরু ও শেষের সতর্ক ঘন্টা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।

প্রশ্নের নম্বর লেখার নিয়মাবলী :
* উত্তর লেখা শুরুর আগে প্রশ্নানুসারে তার নম্বর সুন্দরভাবে স্পষ্ট করে মর্জিনের মধ্যবর্তী জায়গায় লিখতে হবে। * প্রশ্নপত্রে যেভাবে প্রশ্নের আউট লাইন দেয়া আছে (যেমন-১। / ১. / (১) / (ক) / ক) / ক. ইত্যাদি) ঠিক তেমনি ভাবে নম্বর লেখার সময় সেই আউট লাইন ব্যবহার করতে হবে। * প্রশ্নের নম্বর পূর্ণরূপে লেখা উচিত, যেমন – ১। নম্বর প্রশ্নের (ক) এর প্রশ্নের উত্তর : * ইংরেজীর ক্ষেত্রে লিখতে হবে- অহং. ঃড় ঃযব ছ. ঘড়. ১

প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর করণীয় :
প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর উত্তর লেখা শুরু করার পূর্বে/আগে করণীয় কাজ ৫ টি।
ক) প্রশ্নটি প্রথমে ভালকরে পড়া। খ) প্রশ্নটি তোমার কাছে কি উত্তর প্রত্যাশা করছে মগজের সংরক্ষিত তথ্যভাণ্ডার তা জানা। গ) উত্তর কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। ঘ) সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করা। ঙ) সঠিক উত্তরটি প্রশ্নের ধরণ ও মান অনুযায়ী সহজ-সরল ভাষায়, নির্ভুলভাবে লেখা।

সৃজনশীল প্রশ্নের ধারণা :
# সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে একটি উদ্দীপকের নিচে চারটি প্রশ্ন থাকে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ পরিপত্রানুযায়ী যার উত্তর দান পদ্ধতি হবে নিম্নরূপ :
ক.জ্ঞানমূলক : মান-১, (স্মৃতি মূলক) উত্তরের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ তিন বাক্য। এ প্রশ্নের উত্তর সাধারণত এক কথায় হয়, তবে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ তিন বাক্য পর্যন্ত লেখা যাবে।
খ. অনুধাবনমূলক : মান-২, (স্মৃতিমূলক-১ ও অনুধাবন মূলক-১) উত্তরের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ পাঁচ বাক্য। এ প্রশ্নের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তুমি কী বুঝেছ, তার আলোকে সর্বোচ্চ পাঁচ বাক্যে উত্তর করতে হবে। মনে রাখতে হবে যেন অপ্রাসঙ্গিক কোন কথা না চলে আসে।
গ. প্রয়োগ মূলক : মান-৩, (স্মৃতিমূলক-১, অনুধাবন মূলক-১ ও প্রয়োগ-১) উত্তরের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ বার বাক্য। এর উত্তরে সাধারণত সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য, নির্ণয়/প্রয়োগ করে দেখাতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন উদ্দৃতি/কোটেশন থাকলে তা উল্লেখ করলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা : মান-৪, (স্মৃতিমূলক-১, অনুধাবন মূলক-১, প্রয়োগ-১ ও উচ্চতর দক্ষতা যাচাই-১) উত্তরের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ পনের বাক্য। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও পাঠ্য বইয়ের মূল বিষয়বস্তুর উপর পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। গ ও ঘ এর উত্তরে কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ বা অন্য কোন বিষয়ের সংশ্লিষ্ট কোন উদ্দৃতি/ কোটেশন ব্যবহার করলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া সহজ হয়।

বিষয়ভিত্তিক সাজেশান্স:
* লেখার শুরুতে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে লেখা শুরু করবে। * বোর্ড বইয়ের প্রতিটি শব্দ ভালো করে পড়বে, কেননা বোর্ড বইয়ের বিকল্প কিছু নেই। * গাইড নির্ভর পড়ালেড়া পরিহার করে বোর্ড বই, অন্যান্য সহায়ক বই ও শ্রেণী শিক্ষকের সহায়তায় নিজে নিজে উত্তর তৈরির করার চেষ্টা করবে। * লেখার ক্ষেত্রে বানান ভুল করা যাবে না। কঠিন বানানগুলো বারবার দেখে নেবে।  * এৎধসসধৎ এর উত্তর যে কোন উপায়ে সঠিক করতে হবে, কারণ উত্তর সঠিক হলে, এখানে কোনো নম্বর কাটা যায় না। * ঋৎবব ৎিরঃরহম এর ধহংবিৎ গুলো নিজের দক্ষতা অনুযায়ী সহজ বাক্যের মাধ্যমে লেখার চেষ্টা করতে হবে, যাতে বীধসরহবৎ বুঝতে পারেন পরীক্ষার্থী নিজের পৎবধঃরারঃু দিয়ে উত্তর করেছে। * ইংরেজী ও গণিতে অধিক সময় দেয়া, পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। * সৃজনশীল প্রশ্নের ধরণ বুঝতে হবে, পাশাপাশি উদ্দীপক, পাঠ্যবই ও প্রশ্নের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। * উত্তর পত্রে দু’ধরনের কালির কলম ব্যবহার করতে হবে (কালো ও নীল)। * কুরআন ও হাদিসের দলিল বা উদ্দৃতি লেখার ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হতে হবে, আয়াতের অর্থ লেখা যাবে, কোনোভাবেই আরবি উচ্চারণ বাংলায় লেখা যাবে না। * বিশেষ করে ‘গ’ ও ‘ঘ’ এর উত্তর লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক দলিল/কোটেশন/উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে হবে। * কুরআন/হাদিসের দলিল লেখার ক্ষেত্রে নীল কালির কলম ব্যবহার করতে হবে। * বেশি করে কোটেশন লিখলে উত্তরের মান ভাল হয় এবং নম্বর ও বেশি পাওয়া যায়, তবে তা ভুল হলে নম্বর কমে যায়। * সহজ সরল ভাষায় গুছিয়ে উত্তর লিখবে। * দুলাইনের মাঝে পরিমান মতো ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে, খাতায় কাটা-ছেড়া করা যাবে না। * কোন লাইন/ শব্দ ভুল হলে  একটানে কেটে দিতে হবে। * অবশ্যই ১০০ নম্বরের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। * সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করতে হবে।

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা
বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।
০১৯২২-৯৬৮২৯২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here