দেখতে নীল। বলা যায় সে নীলের সমার্থক। আদতে ফুল। ফুলের নাম অপরাজিতা। বেশ মজার ব্যাপার, যা কোনো দিন পরাজয় বরণ করেনি। এ সুন্দর নামের ফুলটি আমাদের দেশীয় ফুল। এটি লতা জাতীয় ছোট ফুল গাছ। বাঁশের বেড়া, গেট ও রেলিং এ ফুল গাছের বেড়ে ওঠার বাহন। তবে টবে এ ফুল খুব সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। ফুল দেখতে বকফুল বা সিমফুলের মতো। সাধারণত নীল, সাদা ও বেগুনি এ তিন ধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে নীল অপরাজিতা প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। অপরাজিতার কিছু কিছু প্রজাতি দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। তাই এর ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই।
অপরাজিতা অতি প্রাচীন ফুল। এ ফুলের অনেক গল্প লোকমুখে প্রচলিত। জাতকে, কালিদাসের শকুন্তলায় এ ফুলের উলেখ রয়েছে। দূর্গা দেবীর অপর নাম অপরাজিতা। এ ছাড়াও হিন্দুরা এ ফুল দিয়ে পূজো দিয়ে থাকেন।
অপরাজিতা বারমাস ফুটলেও প্রধানত বর্ষার মৌসুমী ফুল। কারণ বর্ষায় এ ফুল বেশি দেখা যায়। তবে নীল অপরাজিতা আমাদের সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। অপরাজিতর মতো এমন চমৎকার নীল ফুল আর কয়টি আছে? এমন মজার নামই বা কয় জনের হয়।
অপরাজিতা ঔষধি ফুল গাছও বটে। এর শুধু রং নয় গুনও রয়েছে। এর লতা, পাতা, শিকড় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি নিরাময় করে। বয়:সন্ধিকালীন উন্মাদ রোগ, গলগন্ড রোগ, ফুলা রোগ, ঘন ঘন প্রস্রাব,স্বরভঙ্গ, শুষ্ক কাশি, আধকপালে ব্যথা ইত্যাদি রোগে অপরাজিতার মূল, ফুল পাপড়ি, গাছের লতাপাতা, মূলের ছাল ও বীজ ব্যবহার হয়ে থাকে।
মূর্ছা বা হিস্টিরিয়া আক্রমণের সময় এর মূল গাছ ও পাতা থেঁতে ছেঁকে ১ চা চামচ রস কোনোরকমে খাইয়ে দিলে সেরে যায়।
বয়:সন্ধিকালীন উন্মাদ রোগের চিকিৎসায় এর মূলের ছাল ৩ থেকে ৬ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে বেটে দিনে ২ বার আতপ চাল ধোয়া পানি দিয়ে খেলে রোগমুক্তি ঘটে।
গলগন্ড রোগে এর মূল ৫-৬ গ্রাম আন্দাজ ঘি দিয়ে শিলে পিষে অল্প মধু মিশিয়ে খেলে ভালো হয়ে যায়।
পুরোনো ফোলা রোগে নীল অপরাজিতা পাতা মূলসমুহ বেটে অল্প গরম করে লাগালে ফুলা সেরে যায়।
শিশু অথবা বয়স্ক যারা ঘন ঘন প্রস্রাব করে এই ক্ষেত্রে সাদা বা নীল অপরাজিতা গাছের মূলসহ রস করে ১ চা চামচ প্রতিনি ২ বার একটু দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
স্বরভঙ্গহলে ১০ গ্রাম থেঁতলে ৪-৫ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ১৫ মিনিট গারগল করলে সেরে যায়।
শুষ্ক কাশি হলে অপরাজিতা মূলের রস ১ চা চামচ আধা কাপ অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে সেই পানি ১০-১৫ মিনিট মখে পুরে রেখে গারগল করলে ভালো হয়ে যায়।
আধকপালে ব্যথার রোগে এক টুকরা মূল ও গাছ থেঁতলে তার রসের নস্যি নিলে সেরে যায়।
সতর্কতা: এ গাছের সবকিছুই ঔষদ হিসেবে ব্যবাহার হয় । তবে মূল এবং বীচি বেশী পরিমাণে খেলে শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । কাজেই এর পরিমান খুবই সাবাধানে প্রয়োগ করা উচিৎ।