হাসান চৌধূরী : নবীগঞ্জ প্রতিনিধি –
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের ৬ বছরের এতিম শিশু বাচ্চাকে নগ্ন করে অমানবিক নির্যতনকারী একই গ্রামের তার চাচা স্বপন মিয়াকে রাতভর অভিযান চালিয়ে বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের তার শশুর বাড়ি থেকে বুধবার ভোর রাতে গ্রেফতার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমান। ঘটনার খর পেয়ে পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে প্রেস বিফ্রিংয়ের মাধ্যমে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান তিনি।
জানাযায়, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের মৃত সুফি মিয়ার ৬ বছরের এতিম শিশু বাচ্চা জিসানকে নগ্ন করে অমানবিক নির্যাতন করে তার ভিডিও চিত্র প্রবাসী মায়ের কাছে পাঠাত গ্রেফতারকৃত স্বপন। বাবা হারা ছোট শিশুকে দাদা-দাদী আর চাচা স্বপনের কাছে রেখে জীবিকার তাগিদে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব গিয়েছিলেন ওই শিশু জিসানের মা সুমনা বেগম। আর যাওয়ার আগে সন্তানদের দেখাশুনার জন্য তাদের চাচা স্বপনকে কিছু টাকাও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সৌদি আরব যাওয়ার দুই মাস যেতে না যেতেই তার সন্তানদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। টাকা দেয়ার জন্য ৬ বছর বয়সী আপন ভাতিজাকে নগ্ন করে নির্যাতন করে সেই ভিডিও তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন চাচা স্বপন মিয়া।
নিজের সন্তানের উপর এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দেশে চলে আসেন জিসানের মা সুমনা বেগম। এ বিষয়টি জানান তার প্রতিবেশীরা। শিশু নির্যাতনের খবর পেয়ে তাদের বাড়ি চরগাঁও গ্রামে ছুঁটে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। এ সময় সুমনা বেগম তার শিশু বাচ্চা জিসানের উপর অমানবিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন ও নির্যাতনের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখান। এরই প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয় শিশু নির্যাতনের বিষয়টি। শিশু জিসানকে নির্যাতনের বিষয়টি দ্রæত ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরে নজরে আসে পুলিশ প্রশাসনের। মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর থেকে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমানের নের্তৃত্বে এক দল পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে নির্যাতনকারী স্বপন মিয়াকে বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের তার শশুর মাসুক মিয়ার বাড়ি থেকে ভোর রাতে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরো বলেন, মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নবীগঞ্জে নির্যাতনের শিকার পিতৃহারা ৬ বছর বয়সি ছোট শিশু জিসান বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছে তার নানার বাড়ীতে। এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর ও মুরুব্বিয়ানদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে মামার মাধ্যমে নানার বাড়ীতে পাঠানো হয়। সুত্র জানায়, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের সুফি মিয়ার সাথে বিয়ে হয় সুমনা বেগমের। সুফি মিয়ার মৃত্যুর পর ছোট শিশুর কথা চিন্তা করে সুফি মিয়ার ভাই স্বপন মিয়ার নিকট বিয়েতে রাজি হন সুমনা বেগম। জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান সৌদি আরব। সেখানে গিয়ে শান্তিতে থাকতে পারেননি গৃহবধূ সুমনা। টাকার জন্য তার সন্তাকে নির্যাতন করে দেবর স্বামী স্বপন মিয়া। আর সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে প্রেরণ করে মায়ের নিকট। এই দৃশ্য দেখে হতভাগা মা সন্তানকে নির্যাতনের নিকট থেকে উদ্ধার করতে ধাপে ধাপে স্বপনের নিকট টাকা প্রেরণ করেন। সেই টাকা উত্তোলন করে স্বপন। এই বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে স্থানীয় মুরুব্বিয়ানদের সহযোগিতায় শিশু জিসানকে তাঁর মামার মাধ্যমে নানার বাড়ী পাঠান।