আন্তর্জাতিক ডেস্ক – উন্নত চিকিৎসার আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে গেলে দেখা যায় সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের একটা বড় অংশই বাংলাদেশের নাগরিক। এছাড়া চেন্নাইতেও বাংলাদেশ থেকে অনেকে যান চিকিৎসা গ্রহণের জন্য।
অথচ সেই ভারতেই মাত্র একটি সইয়ের জন্য হাসপাতালে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ২০ দিনের এক মুমূর্ষু শিশুকে। ফলে বাঁচানো যায়নি তাকে। গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে (এনআরএস) এই ঘটনা ঘটেছে।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে মোহম্মদ সুভান ২০ দিনের এক মুমূর্ষু শিশুকে রক্ত দিতে প্রয়োজন ছিল মাত্র একটি সইয়ের। অথচ এর জন্য তার পরিবারকে এনআরএস মেডিকেল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখে। সইয়ের জন্য এভাবে অপেক্ষায় থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর পান লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা মোহম্মদ সফিকুল এবং মা নার্গিস বিবি। অথচ রক্তদাতাও তখন হাজির!
সফিকুল বলেন, ‘আমার বাচ্চার অবস্থা যে খুব খারাপ, চিকিৎসকেরা তা বলেই দিয়েছিলেন। কিন্তু একটা সইয়ের জন্য আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে কেন? রক্ত পেলেও বাচ্চা হয়তো বাঁচত না। কিন্তু শেষ চেষ্টা তো করা যেত, তা-ও হলো না। এ ঘটনার পর শিশুটির নানা বাবু আলি এনআরএসের সুপারের ঘরের বাইরে ড্রপবক্সে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
শিশুটির দাদা মোহম্মদ আসলাম জানান, এদিন সকাল ৫টা নাগাদ তিনি হাসপাতালের ‘সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) থেকে রক্তের (বিরল বম্বে গ্রুপ) ‘রিকুইজিশন স্লিপ’ হাতে পান। সেই স্লিপে এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারীকের সই আবশ্যিক ছিল। সেই স্লিপ এবং রক্তের নমুনাসহ রক্তদাতার কলকাতা মেডিকেল কলেজে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে ওই রক্ত থেকে উপাদান তৈরি করে এনআরএসে আনার কথা ছিল। কিন্তু আসলাম যখন স্লিপ হাতে পান ততক্ষণে সব শেষ। প্রায় ওই সময়ে পাথরপ্রতিমা থেকে কলকাতায় রওনা হন দাতা সুধীর মান্না।
আসলামের কথায়, ‘সুধীরবাবু শহরে না পৌঁছলে মেডিকেলে গিয়ে লাভ ছিল না। তাই সকাল ৭টা নাগাদ এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কে যাই। কাউন্টারে মুখ বাড়িয়ে ডাকাডাকি করার পর এক কর্মী বললেন, রেফার করার মতো এখন কেউ নেই! সাড়ে ৯টার পরে আসুন। সাড়ে ৯টার পরে যখন গেলাম, আবার বলা হল অপেক্ষা করতে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই খবর পেলাম, নাতি মারা গেছে।’ খবর পেয়ে মেডিকেল কলেজ থেকে ফিরে যান রক্ত দিতে আসা সুধীরবাবুও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার সুজিত ভট্টাচার্য। তারই স্লিপে সই করে মেডিকেলে ‘রেফার’ করার কথা ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি তো হাসপাতালেই ছিলাম। আমাকে কেউ বলেনি উনারা ৭টার সময়ে এসেছেন। ৯টার পরে ঘটনা জানা মাত্র স্লিপে লিখে দেই, আমাদের ব্লাড ব্যাংকে রক্ত নেই। অন্য ব্লাড ব্যাংকে খোঁজ করা হোক।’ সুজিত ভট্টাচার্য জানান, ওই সময়ে কাউন্টারে ছিলেন কর্মী সুশান্ত দাস। রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। রাত পর্যন্ত উত্তর দেননি এসএমএসের।
ব্লাড ব্যাংকের পরিচালক দিলীপ পাণ্ডা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ খবর পাওয়া মাত্র দ্রুত রেফারের ব্যবস্থা করেছি। আরও আগে খবর পেলে ভালো হতো।’
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নবজাতক মোহম্মদ সুভান হার্সস্প্রাঙ্গ রোগে আক্রান্ত ছিল। এই রোগে বৃহদন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে আক্রান্তের মলত্যাগে অসুবিধা হয়। স্নায়ুর সমস্যায় তার দেহে এই সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে এনআরএসে প্রথম অস্ত্রোপচারের পরে সেলাইয়ের জায়গা ফেটে গিয়েছিল। প্রয়োজন হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের। চিকিৎসকদের বক্তব্য, সদ্যোজাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায় সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।