চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একটি মহল কাকুড়িয়া বাওড়ের একাংশ দখল করে বছরের পর বছর মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি বছরে সমুদয় বাওড় সরকারের নিকট থেকে স্থানীয় জেলেরা লিজ নেয়ার পরও বাওড়ে নামতে পারছেনা। ফলে বাওড় পাড়ের জেলেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হওয়ার পাশাপাশি অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক অবৈধ দখলদারদেও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসি।
সূত্র জানায়, চৌগাছা উপজেলাতে যে কয়টি সরকারী বাওড় আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি বাওড় হচ্ছে কাকুড়িয়া বাওড়। এই বাওড়কে কেন্দ্র করে বাওড় পাড়ে গড়ে উঠেছে জেলে পল্লী। যুগযুগ ধরে তারা সেখানে মাছ আহোরন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। ব্যতিক্রম হয়নি কাকুড়িয়া বাওড়ের ক্ষেত্রেও। বাওড়টি সরকারী হওয়ার সুবাধে প্রতি তিন বছর পর পর বাওড়টি ইজারার মাধ্যমে ওই জেলেদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়া হয়।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাওড়ের দিকে কুদৃষ্টি পড়ে কতিপয় স্বার্থন্বেশি মহলের। বলাচলে তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাওড়ের একটি অংশ দখল নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করে আসছে। যার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে জেলে পল্লীর জেলেরা। সূত্র জানায়, চলতি বছরে বাওড়টি পুনরায় ইজারার ঘোষনা এলে কাকুড়িয়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড ইজারা পাই।
আগামী তিন বছরের জন্য ভ্যাটসহ (১৪২৬ হতে ১৪২৮ বাংলা সন পর্যন্ত) ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭শ ২৩ টাকায় লিজ গ্রহন করেন। জেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটি চলতি বছরের ২৪ মার্চ এই বন্দবস্ত দেন। লিজ গ্রহনের প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হতে যাচ্ছে কিন্তু আজও বাওড়ের একাংশ ওই জেলেরা তাদের দখলে নিতে পারেনি।
মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি পরিতোষ কুমার বলেন, বছরের পর বছর বাওড়টি স্থানীয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে ডাক হয় এবং তারাই সেখানে মাছ চাষ করেন। কিন্তু ২০১৭ সালের প্রথম দিকে পাশ্ববর্তী দিঘড়ী গ্রামের ইউছুপ আলীর ছেলে রুহুল আমিন কিছু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বাওড়ের প্রায় ১২ একর জলাকার দখল করে মাঝখানে পাটা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে।
বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা উপর মহল থেকে এই জায়গা লিজ নিয়েছি। সে সময় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নার্গিস বগমের নিকট একটি অভিযোগ দিয়ে অফিসের নিচে নামা মাত্রই রুহুল আমিনের নেতৃত্বে জেলেদের শারীরীক ভাবে লঞ্চিত করা হয়। শুধু তাই না, ওই ১২ একর জলাকারের দিকে নজর দিলে জেলেদের দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।
গত তিন বছর এক প্রকার গায়ের জোরে রুহুল আমিন গ্যাং বাওড়ের ১২ একর জলাকারে অবৈধ ভাবে মাছ চাষ করে আসছেন। জেলেরা গেল তিন বছরে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাইনি বলে জানা গেছে। জেলে পল্লীর বিষ্ণু পদ হালদার বলেন, কাকুড়িয়া বাওড়টির মোট জলাকার হচ্ছে প্রায় ৭৫ একর। সমস্ত জলাকারই আমরা সরকারের নিকট থেকে তিন বছর অন্তর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি।
কিন্তু ২০১৭ সালে রুহুল আমিন গ্যাং ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে প্রায় ১২ একর জলাকার দখল করে নেয়। চলতি বছরে দরপত্র আহবান করা হলে আমরা সমিতির পক্ষ হতে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনি। কর্তৃপক্ষ ওই ১২ একরসহ সমুদয় জলাকার আমাদের সমিতির নামে ইজারা প্রদান করেন। কিন্তু ৮ মাস পার হলেও আমরা বেদখল হয়ে যাওয়া ১২ একর জলাকার এখনও নিজেদের দখলে নিতে পারেনি।
বিষয়টি নিয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এবিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল আমিনের ছেলে ফারুক হোসেন বলেন, কাকুড়িয়া বাওড়ের মোট পরিমানের মধ্যে ১১ দশমিক ৮৬ একর জলাকার ক্রয় সূত্রে মালিক আমার পিতা রুহুল আমিন। অবৈধ ভাবে কর্তৃপক্ষ কাকুড়িয়া মৎস্যজীবি সমিতির কাছে ওই অংশটি ইজারা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মৎস্যজীবিদের পক্ষ হতে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, আমি ছুটিতে থাকায় নথিভুক্ত অভিযোগটি দেখতে পারেনি, তবে মৌখিক ভাবে শুনেছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।