আব্দুল আলীম, চৌগাছা প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় কৃষকদের ধান চাষে অনিহা প্রকাশ। ধানের দাম কম হওয়ায় চৌগাছা উপজেলার মানুষ ধান চাষে অনিহা প্রকাশ করছে। চৌগাছা উপজেলার কৃষকদের গোলাভরা ধান কিন্তু দাম নাই ধানের, সরকার কৃষকদের জন্য ১০৪০ টাকা ধান কেনার কথা বললেও সব কৃষক এই সুযোগ পাচ্ছে না।চৌগাছা উপজেলার অনেক গ্রামে খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য ৪ থেকে ৫ জনকে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে তাদের ধান ১০৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে এতে প্রায় সব কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে, অনেকটা থুথু দিয়ে ছাতু ভিজানোর মতন। উপজেলা সদর ইউনিয়নের কয়ারপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন আমার ধানী জমির পরিমাণ ১৮ বিঘা। পরতি আবাদে ধানের পরিমাণ আল্লাহ যাই দেয় ভালোই দেয়। কিন্তু বাজারে ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় অনিহা জাগে ধান চাষে। আজ থেকে ১০/১২ বছর আগেও মিনিকেট ধানের দাম ছিলো মণ প্রতি ১০০০/১২০০ টাকা। এখনও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু অন্যান্য দ্রব্য মূল্য কি এই ১০/১২ বছরে পরিবর্তন হয়নি। ১৭ বছর আগে গরুর গোশতের কেজি ছিলো ৬০/৬৫ টাকা এবং ছাগলের গোশতের কেজি ছিলো ১৪০/১৫০ টাকা। কিন্তু আজ ১৭/১৮ বছরের ব্যবধানে তাদের মূল্যের কি কোনো পরিবর্তন হয়নি? বর্তমানে গরুর গোশতের কেজি ৫৫০ টাকা এবং ছাগলের গোশতের কেজি ৭০০/৭৫০ টাকা। পায়ে পরা ভালো একজোড়া জুতার দাম ছিলো ৩০০/৪০০ টাকা। এখন বাচ্চাদের (১-৩ বছরের) একজোড়া ভালো জুতার দাম ৬০০/৮০০ টাকা এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের একজোড়া চামড়ার ভালো জুতার দাম (১২০০-৩০০০) টাকা। ভালো জিনিষ খেতে, পরতে, মাখতে সবার ইচ্ছা জাগে। আমরা চাষী বলে কি আমাদের, সন্তানদের, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কি এসব ইচ্ছা জাগতে পারে না। কিন্তু আমাদের মতো ধান চষীদের পরিবারের একজন সদস্যের জন্য ভালো জুতা কিনতে ৩-৪ মণ ধান, ভালো প্যান্ট শার্ট কিনতে ৫-৬ মণ ধান, ভালো একটি বেল্ট ও একটি ঘড়ি কিনতে ২-৩ মণ ধান, এছাড়া বাড়িতে পরে থাকার জন্য অন্যান্য পোশাকাদি কিনতে আরও ২-৩ মণ ধান লাগছে। এতেইতো সীমাবদ্ধ নয়। এখনো ঐ সদস্যের খাওয়ার জন্য চাউল ও বাজার খরচ বাবদ ১৮ মণ ধান লাগে। তবে বছরে ঐ সদস্যের সমগ্র খরচ বাবদ ৩০-৩৫ মণ ধান লাগে। তাহলে কৃষি মন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন আমরা ধান চাষীরা কিভাবে চলবো? আর কেনোই বা ধান চাষ করবো। এই জন্য কয়েক মৌসুম আগে থেকে ইচ্ছা খাওয়ার জন্য অল্প খানিক জমিতে ধান করবো এবং বাকি জমি লিজ দেবো। সেই হিসাবে নিজে মাত্র দুই বিঘা জমি ধান করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় জমি লিজ নেওয়ার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। গড়ে আমরা চাষীরা পড়ে গেছি বড় বিপাকে। আমাদের চাষের ধানেই যে সারাদেশ চলে এটা সরকার বা উপর মহলের নজরেই নেই। নজর থাকে ভোটের সময়। চাষী সমাজ, সমাজের খেটে খাওয়া পরিবারের ভোটই তো দেশের মোট ভোটের (৮০-৮৫)%। তবুও আমেদের দেখার কেউ নেই, জানার কেউ নেই। দেশের সবচেয়ে অসহায়, অবহেলিত লোক আমরা চাষীরা।উপজেলার ধূলিয়ানী ইউনিয়নের চাষী শামসুলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গত মৌসুমে ধান করেছিলাম ১০ বিঘা এবার আবাদ করবো ২ বিঘা। তিনি বলেন, গত মৌসুমে ধান চাষে নিজের জমিতে বিঘা প্রতি সমস্ত খরচ বাদে ইনকাম হয় ৮০০০ টাকা। আর লিজের জমি হলে এক্ষেত্রে আমার বিঘা প্রতি (২৪০-৩০০) টাকা লোকসান হতো। আমার গোলাভরা ধান হয়েছিলো কিন্তু ধানের ফলন বেশি হলেও দাম না থাকার কারনে লোকসান গুনতে হচ্ছে, লস থেকে বাঁচার আসায় ধানের দাম বাড়লেই বিক্রি করবো বলে রেখে দিয়েছি।