কলারোয়ার খলসি গ্ৰামের  চার খুন মামলায় রায়হানুরের ফাঁসির রায় ঘোষণা

0
0

তরিকুল ইসলাম,সাতক্ষীরা ব্যুরো: সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসী গ্রামে একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী ও তাদের দু’ সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার একমাত্র আসামী রায়হানুর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন। একই আদেশে আসামীকে সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীর নাম রায়হানুর রহমান (৩৬) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামের প্রয়াত ডাঃ শাহাজাহান আলীর ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের বড় ছেলে শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেন। মেঝ ছেলে আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে সে খাওয়া দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুর রহমানকে। সংসারে টাকা দিতে না পারায় শাহীনুৃরের স্ত্রী দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতো। এরই জের ধরে গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই মোঃ শাহীনুর রহমান(৪০) ভাবী সাবিনা খাতুন(৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যূালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয় এর সাথে বিশেষ চেতনানাশক বড়ি খাওয়ায় রায়হানুল। পরদিন ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যাকারী ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়।

এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শ্বাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী ময়না খাতুন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় ১৫ অক্টোবর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখার (সিআইডি) সাতক্ষীরা অফিসের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাই রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মন্ডলের কাছে একাই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। একই দিনে অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক শেখ ওমর ফারুক তার সাতক্ষীরা অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন। পরবর্তীতে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. ফরহাদ হোসেন রায়হানুর রহমানের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানালে আদালত তা নথিভুক্ত করে।

তদন্তভার গ্রহণের এক মাস আট দিন পর ২৮ জনের সাক্ষী ও রায়হানুলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রায়হানুর রহমানকে একমাত্র আসামী করে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। গত ১৪ জানুয়ারি আসামী রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠণ করা হয়। মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৭ জন সাক্ষী ও আসামীপক্ষে একজন সাফাই সাক্ষী দেন। নিহত পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে।

২২ আগষ্ট মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রথমে ২৯ আগষ্ট ও পরে পহেলা সেপ্টেম্বর রায় এর জন্য দিন ধার্য করা হয়। মামলার ১৮জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন।

এদিকে মামলার রায় শোনার পর রায়হানুলের স্বজনরা আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ রায় চাঞ্চল্যকরা এ মামলার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকান্ডের ১০ মাস ১৬ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মামলার যে রায় হয়েছে তাতে আগামিতে কোন ব্যক্তি যাতে এ ধরণের নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটাতে সাহস না পায় তার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উচ্চ আদালতের এ রায় বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. এসএম হায়দার আলী বলেন, এ বিচারে তিনি খুশী হতে পারেননি। মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে এ রায় এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here