আজিজুল হক নাজমুল –
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে আওয়ামীলীগের তৃনমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠায় উপজেলা কাউন্সিল স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে ও ওয়ার্ডে ত্যাগি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পকেট কমিটি গঠন করায় পদ বঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করলে রোববার (০১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কমিটি সকল ইউনিয়ন ও আগামী ৪ ডিসেম্বরের উপজেলা কাউন্সিল স্থগিতের নির্দেশ দেন।-খবর উলিপুর-কুড়িগ্রাম থেকে হাফিজুর রহমান সেলিম।
জানা গেছে, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এ উপজেলায় ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কাউন্সিলের জন্য এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম থেকেই কমিটি গঠন নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ উঠে ত্যাগি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন ও সুবিধাবাদীদের দিয়ে কমিটি গঠন করায় উপজেলা জুড়ে তৃনমুল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে দূর্গাপুর, গুনাইগাছ, বেগমগঞ্জ, দলদলিয়া, থেতরাই, পান্ডুলসহ অধিকাংশ ইউনিয়নেই পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আরও জানান, স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাউন্সিল গুলোতে উপস্থিত থাকায় তাদের প্রভাবের কারনে ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা মুখ খুলতে সাহস পান না। সে কারনে তারা কেন্দ্রে অভিযোগ করেছেন। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে গিয়ে দলদলিয়া ও পান্ডুল ইউনিয়নে নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়ে পুলিশের সহায়তায় নেতৃবৃন্দকে সম্মেলনের স্থান করতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা রোববার (০১ ডিসেম্বর) রাতে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কেন্দ্রের নির্দেশনায় ৪ ডিসেম্বরের উপজেলা কাউন্সিল স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক তাকে ফোনে কেন্দ্রের নির্দেশনা জানিয়েছেন।
গুনাইগাছ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান জানান, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টি ওর্য়াডের কাউন্সিল সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু পরিকল্পিতভাবে স্থগিত রাখেন। পূর্বের কমিটি ও মনোনীত প্রার্থীর ৯ জনের মধ্যে ৭জনের অনুপস্থিতিতে এবং ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিলদের তালিকা প্রকাশ না করেই ২১ নভেম্বর অ-গঠনতান্ত্রিক ভাবে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের আস্থাভাজন লোকদের দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেন, যা বৈধ নয়। তাই এব্যাপারে আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ করেছি। বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন স.ম নুরে এলাহী সিদ্দিকী বলেন, এ ইউনিয়নে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় বিকালে সেখানে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা বক্তব্য দিতেই রাত করে ফেলেন। পরে ব্যালটের মাধ্যমে সভাপতি ও সম্পাদক পদে ভোট গ্রহন করেন। সেখানে সভাপতি পদে ৬জন ও সম্পাদক পদে তিনিসহ চারজন অংশগ্রহন করেন। ভোট শেষে ফলাফল ঘোষনার জন্য নেতা-কর্মীরা চাপ সৃষ্টি করলেও নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা দেখিয়ে ভোট গননা না করে সেখান থেকে উপজেলা সদরে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষনা করেন। এমনকি কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন তা জানানো হয়নি।
সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন তালুকদার জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে ত্যাগী-নিবেদিত কর্মিদের বাদ দিয়ে নাবগত ও নিজেদের প্রার্থীদের দিয়ে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কারনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপজেলা কাউন্সিল স্থগিত ঘোষনা করেছেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান, তৃনমুলে কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের অভিযোগের কারনে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চাষী করিম, যুগ্ম সম্পাদক শেখ বাবুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর কেন্দ্র অনুমতি দিলে নতুন করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করা হবে।